প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:১৩ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি অপরাধ করিনি, তাই শঙ্কিত নই। আমাকে ডাকা হয়েছিল, তাই এসেছিলাম। যেহেতু এটা আইনগত বিষয়, তাই বিস্তারিত আমার আইনজীবী বলবেন।’
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককল্যাণ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তলবে সংস্থাটির কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস তার প্রতিক্রিয়া জানান।
এদিন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে দুদক কার্যালয়ে আসেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের কয়েকজন কর্মকর্তা। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
দুদক তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান দুদক কার্যালয়ে আসেন। সকাল ১০টা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেলা ১১টার দিকে দুদক কার্যালয়ে থেকে বের হন ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বুধবার গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। তারা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক নাজনীন সুলতানা, নূরজাহান বেগম ও হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
‘মামলা ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক’
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই মামলা অবশ্যই ভিত্তিহীন। কাল্পনিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি ড. ইউনূসের আইনজীবী হিসেবে ভেতরে (দুদক কার্যালয়ে) গিয়েছিলাম এবং আমি আইনের সমস্ত ব্যাখ্যা ওইখানে দিয়েছি। উনারা (দুদক) বলেছেন ওই সমঝোতা চুক্তিটি জাল। আমি বলেছি, আপনারা জাল বলতে পারেন না, কারণ দুই পক্ষের সমঝোতা যখন হয় তখন আর সেটা জাল থাকে না এবং এটা হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়া। সুতরাং এটা জাল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই চুক্তিতে ছিল শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে আমরা অ্যাকাউন্ট করেছি। হ্যাঁ, আমরা টেলিফোনে অনুমতি নিয়েছি, কারণ সবাই একসঙ্গে থাকে না। আমরা ৯ তারিখের জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার অনুমতি নিয়েছি। দুদক বলেছে- আপনারা অনুমতিটা পরে নিয়েছেন। আমি বলেছি, দেরি হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
ড. ইউনূসের এই আইনজীবী বলেন, ‘ড. ইউনূসের নামে দুদক একটা মামলা করেছে দুদক। বলা হয়েছে শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়নি। এর ভেতরে শ্রমিকরা তাদের অগ্রিম হিসেবে ২৬ কোটি টাকা দাবি করেছে। শ্রমিকরা বলেছে ২০১৭ সাল থেকে আমরা মামলা করেছি।’
‘হাইকোর্টের অনুমোদনে, নির্দেশে আমরা এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তাদের (শ্রমীকদের) ৪৩৭ কোটি টাকা তাদের দিতে সম্মত হয়েছি। কারণ ওই টাকাটা শ্রমিকরা আবেদন করে। ট্রেড ইউনিয়ন বলছে, আমাদের টাকাটা এডভান্স দিতে হবে। না হলে আমাদের আইনজীবী কাজ করবে না। তখন শ্রমিমদের ট্রেড ইউনিয়ন তাদের আন্ডারটেকিং নিয়ে ২৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুদক বলছে, আপনারা জালিয়াতি করে তাদের সঙ্গে ইয়ে করে নিয়ে নিয়েছেন। ড ইউনূস সাহেব বললেন, এটা তো দুই পক্ষের সমঝোতা। টাকা দেওয়া হয়েছে, শ্রমিকের সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যেটা হাইকোর্ট অনুমোদন করেছে। সুতরাং এইটা তো জালিয়াতি হতে পারে না’ যোগ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটা জালিয়াতি হতে পারে না। হাইকোর্ট নির্ধারণ করেছে। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সেটা দিয়ে দিয়েছি। এখানে জালিয়াতির কোনো প্রশ্ন নাই। কারণ ৪৩৭ কোটি টাকা হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক ওইটা শ্রমিকের টাকা হয়ে গেছে। শ্রমিকদের টাকা থেকে তাদের এডভান্স দেওয়া হয়েছে উকিলের ফী এবং মামলার খরচ তারা আগে নিয়েছে। এটা তো জালিয়াতি হয় না। জালিয়াতি হয় তখন যখন এক পক্ষ আরেক পক্ষের স্বাক্ষর করে জাল করে কোন ডকুমেন্টস করে। এখানে দুই পক্ষ উপস্থিত হয়ে চুক্তি করেছে। দুই পক্ষ যখন চুক্তি করে সেটা তো জাল হতে পারে না।’
‘এজাহারে বলা হয়েছে- মিটিংয়ের আগেই টাকা সরানো হয়েছে’ সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই আইনজীবী বলেন, ‘তখন মিটিংয়ের পরিবেশ ছিল না। কারণ সমাঝোতা চুক্তিতে নির্দেশ ছিল ৭ দিনের ভেতরে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে কোম্পানি এমুলেশনের জন্য পত্রিকায় ৯ তারিখে হাইকোর্ট নোটিস পাবলিশ হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের কনফিডেন্স নেওয়ার জন্য ৮ তারিখ একাউন্ট খোলা হয়েছে। এটা আইনে টিকবে। কারণ মিয়া বিবি রাজি, ক্যায়া করেগা কাজি। দুই পক্ষ সম্মত, এইখানে অন্য কারোর অধিকার নাই।’
বিষয়টি নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ষড়যন্ত্র আছে। যিনি অপরাধ করেননাই তার বিরুদ্ধে যদি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়, কারও পক্ষের থেকে কারও উস্কানি ও প্ররোচনা থাকতে পারে। আমরা দুদকে আইনের সমস্ত ব্যাখা দিয়েছি। উনারা বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তিটা জাল। আমি বলি এটা জাল বলতে পারেন না যখন দুই পক্ষ সম্মত, আবার হাইকোর্টের অনুমোদনপ্রাপ্ত। সুতরাং এটা জাল না।’