× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এ. কে. আজাদ বনাম জেলা আওয়ামী লীগ

সাজ্জাদ হোসেন রনি, ফরিদপুর

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:১২ এএম

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২৬ পিএম

এ. কে. আজাদ বনাম জেলা আওয়ামী লীগ

কয়েক বছর আগেও ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সর্বেসর্বা ছিলেন সদর আসনের (ফরিদপুর-৩) সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হওয়ার পর দলের স্থানীয় রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। অবশ্য ১৯৯৬ সালে প্রথমবার নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই সদর আসনটি নিজের জন্য পাকাপোক্ত করে নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক এই সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন খন্দকার মোশাররফ। কারণ তার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশের সুযোগই ছিল না অন্য কারও!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেই পরিস্থিতি আর নেই। ২০২০ সালে দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ফরিদপুর আওয়ামী লীগে চালানো হয় শুদ্ধি অভিযান। সেই অভিযানে ধসে পড়ে খন্দকার মোশাররফের খেয়াল-খুশির রাজত্ব। প্রভাব হারিয়ে দাপুটে মোশাররফ নিজের সংসদীয় এলাকায় যান না আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। দলীয় পদ-পদবি হারিয়ে রাজনীতি থেকে অনেকটা নির্বাসনেই আছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না তা প্রায় নিশ্চিত। 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে খন্দকার মোশাররফ নিজেও বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ভাবনার কোনো কারণ নেই। আমি চিন্তা করি আমার মতো অযোগ্য লোক নমিনেশন পাবে না। এটাই ধরে নিয়েছি।’ 

এমনটা ধরে নিয়ে আগামী নির্বাচনে সদর আসনে নৌকার কান্ডারি হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিশিষ্টি শিল্পপতি এ. কে. আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন ও সাবেক এমপি ইমাম উদ্দীন আহমেদের ছেলে সাইফুল আহাদ সেলিম। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন এ. কে. আজাদ ও শামীম হক। হেভিওয়েট এই দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিভেদ-বিভক্তি। বিশেষ করে এ. কে. আজাদের নির্বাচনী তৎপরতা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের অসন্তোষ গোপন রাখছেন না। 

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জনকল্যাণমূলক নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয় ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এ. কে. আজাদের। তাই জেলা আওয়ামী লীগের আপত্তি উপেক্ষা করেই তার পক্ষে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বড় একটি অংশ। তাদের সঙ্গ নিয়ে সদর আসনের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন তিনি। নৌকায় ভোট চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নিয়মিত এলাকায় সময় দিচ্ছেন।

ব্যবসায়িক পরিচিত কাজে লাগিয়ে স্থানীয়দের উন্নয়নে নানা উদ্যোগও নিয়েছেন এ. কে. আজাদ। সদর উপজেলায় পদ্মা নদীর দুর্গম চরে তার দান করা জমিতে মায়ের নামে ‘মাজেদা বেগম মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত জুন মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাদের আপত্তির মুখে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার ফরিদপুর সফর স্থগিত করেছেন। সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের কথা বলা হলেও এখন অবধি তা হয়নি।

এর আগে মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ফরিদপুর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন এ. কে. আজাদ। ওই সমাবেশ বন্ধের জন্যও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ. কে. আজাদের বিরোধের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তার সঙ্গে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের হাতে। খন্দকার মোশাররফ-যুগ শেষে যে সম্মেলনে শামীম-ইশতিয়াক নেতৃত্ব পেয়েছেন; ওই সম্মেলনে বিপুল ঘোষও সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। তার অনুসারীদের কমিটিতে রাখা হয়নিÑ এমন অভিযোগ তুলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধিতায় নেমেছেন তিনি। মূলত তাকে ঘিরেই জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে এ. কে. আজাদের। তাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন বিপুল। এ. কে. আজাদও তার নির্বাচনী কার্যক্রমে পাশে রাখছেন বিপুলকে।

এ. কে. আজাদের নির্বাচনী তৎপরতা নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এজন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ. কে. আজাদ জেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে গুটিকয়েক লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, এমন কার্যক্রম দলের জন্য শুভকর নয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। সদর আসনের দলীয় প্রার্থী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের পক্ষ নেন ইশতিয়াক। বলেন, তিনি (শামীম) দলের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। মনোনয়ন দিলে তিনি অবশ্যই নির্বাচন করবেন। তবে কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই কাজ করবে জেলা আওয়ামী লীগ।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শামীম হক বলেন, আগামী নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং। নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করেই প্রার্থী নির্বাচন করবেন। তিনি কাকে মনোনয়ন দেবেন, তা আপাতত জানার ক্ষমতা কারও নেই। দলের ও স্থানীয় ভোটারদের উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রীর নির্দেশে দিনরাত কাজ করে চলেছি। তিনি সব জানেন। সময়মতো তিনি আমাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন বলে আশা রাখি।

এ. কে. আজাদ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি বলেন, তার সঙ্গে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক। আজাদ বলেছে, আমি মনোনয়ন পেলে সে আমার নির্বাচনী ব্যয়ের অর্ধেক বহন করবে। সে প্রার্থী হলে একইভাবে আমিও তাকে সহযোগিতা করব। কিন্তু তার আগে দলের মধ্যে বিভেদ করা চলবে না। দলকে দুর্বল করা যাবে না। সবসময় এক হয়ে কাজ করতে হবেÑ এ কথা আমি আজাদকে বারবার বলে এসেছি।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এ. কে. আজাদ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এই এলাকা ঘিরে আমার কিছু স্বপ্ন আছে তা পূরণের চেষ্টা করব। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থানের। পদ্মা সেতুকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলের যে সম্ভাবনা, তা কাজে লাগানোর ইচ্ছা আছে আমার। ভোলার গ্যাস যদি এই অঞ্চলে আনা যায়, তাহলে ভারী শিল্পকারখানা স্থাপনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তা করা গেলে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এটাই এ অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন। সেটা করতেই কাজ করব। নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান দেশের এই বিশিষ্ট শিল্পপতি।

জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই। সবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। তবে কোনো কোনো ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে তাদের সঙ্গে নীতিগত বিরোধ রয়েছে। এজন্য আলাদা প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। এরপরও যদি জেলা আওয়ামী লীগ উদ্যোগী হয়, তাহলে আমি একমঞ্চেই কাজ করতে চাই। কারণ দিন শেষে রাজনীতি তো মানুষের জন্যই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা