× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এডিসি হারুনকাণ্ড

শাস্তির বদলে খোঁজা হচ্ছে সমঝোতার পথ!

জামশেদ নাজিম

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৪ পিএম

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৫ পিএম

শাস্তির বদলে খোঁজা হচ্ছে সমঝোতার পথ!

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ, এডিসি সানজিদা আফরিন ও তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে শাহবাগ থানায় সংঘটিত ঘটনায় আজ বুধবার ডিএমপি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত কমিটি এবং একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের দোষ পাওয়া গেলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বদলে সমঝোতামূলক সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ, আমলা ও ছাত্রলীগের মধ্যে সৃষ্ট এ দ্বন্দ্ব ও সংকটের সমাধা হয়, সে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।   

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বারডেম হাসপাতালের ঘটনার রেশ টেনে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় ঘটিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় জড়িত ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের লিখিত জবানবন্দি নেওয়া শেষ হয়েছে। তারপরও কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা গত ২৪ সেপ্টেম্বর আরও তিন দিন অর্থাৎ আজ বুধবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার বিকালে তদন্ত কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে কিছু বলা যাবে না। বারবার সময় বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। কাজ শেষ না হলে কিছু বলা সম্ভব নয়।

দুই তদন্ত কমিটির মধ্যে সমন্বয় করা হবে 

শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় ডিএমপির তদন্ত কমিটির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপু জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পুলিশ-১ অধিশাখা) আবুল ফজল মীর ও ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এরই মধ্যে ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের ও ঘটনার কয়েকজন সাক্ষীর লিখিত জবানবন্দি নিয়েছেন। 

গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন এডিসি সানজিদা। গত সোমবার এ ঘটনায় জবানবন্দি দেন আজিজুল হকসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা। তবে ডিএমপি গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে তারা যা বলেছেন বা লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন, এই কমিটির কাছেও তেমনটিই দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নতুন কিছু পাবে না। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপির গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ দুই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাতে অভিন্ন হয় এবং সমঝোতার পথ বের করা যায়, সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনায় সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার সুযোগ রয়েছে। এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ওপর সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কেউ সমঝোতা না করলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হবে। এই পুলিশ কর্মকর্তা মনে করছেন, এভাবে কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া যাবে। 

পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় হারুণের বিরুদ্ধে তৎকালীন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি এ কারণে হারুনের অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিশিয়াল রিপোর্টে (এসিআর) সবচেয়ে কম মার্কস দিয়েছিলেন। ফলে হারুনের সহকারী পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তার এসিআর সংশোধন হয় এবং তিনি পদোন্নতি পান। শাহবাগ থানার ঘটনায়ও হারুন অদৃশ্য শক্তির বলে বারবার তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সময় বাড়াচ্ছেন বলে জানায় এই সূত্র।

বারবার তদন্ত কমিটির সময় বৃদ্ধি সম্পর্কে ডিএমপির মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বারডেম হাসপাতাল ও বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। সবার কথা শুনে তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও ক্রসচেক করে সিদ্ধান্তে আসতে একটু সময় লাগছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই বাহিনীর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শাহবাগ থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উধাও

শাহবাগ থানার ঘটনার তদন্তে সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু একাধিকবার ডিএমপির লজিস্টিক শাখায় ফুটেজ চেয়েও পায়নি তদন্ত কমিটি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ ফুটেজ আর পাওয়া যাবে না। কারণ সিসি ক্যামেরায় থানার ওসির রুমের সামনে ও আশপাশে এডিসি হারুনের কার্যক্রমের, এমনকি ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতনেরও নানা দৃশ্য ধরা পড়েছিল। এসব ফুটেজ যেন কেউ না পায় সেজন্যে এডিসি হারুন ও থানার ওসি সেসব ডিলিট করে দিয়েছেন। ডিলিট করা ফুটেজও যেন কখনও উদ্ধার করা না যায়, সে ব্যবস্থা করতে থানায় একজন আইডি বিশেষজ্ঞও নিয়ে যাওয়া হয়।

রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তার বডিগার্ড সে রাতে থানার বর্ণনা দিয়ে জানান, সে রাতে থানা কারও নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এডিসি হারুনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন। এক পর্যায়ে মারধরে অচেতন হয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন। তখন রমনা ও শাহবাগ থানার ওসি এডিসি হারুনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এডিসি শাহেন শাহ এসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। পরে ডিবির ওয়ারি বিভাগের এডিসি শাহিদুর রহমান এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর পর আহত ছাত্রলীগ নেতাকে হাসপাতালে নিতে রমনা বিভাগের এডিসি ও এসির কাছে গাড়ি চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ গাড়ি দিয়ে সহায়তা করেননি। এ সময় ডিবির রমনা বিভাগের এডিসি শাহবাগ থানায় এলে তার গাড়িতে করে আহত নেতাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজিজুল হককে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় এডিসি শাহেন শাহের গাড়িতে করে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ থাকলে এসব ঘটনার সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যেত। 

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্য এডিসি শাহেন শাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তদন্ত কমিটি ডিএমপির লজিস্টিক বিভাগের কাছে শাহবাগ থানার সেদিনের ফুটেজ চেয়েছে। তারা ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। 

তদন্ত কমিটির সদস্য নিয়ে প্রশ্ন

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ ডিএমপির তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ায় তদন্তকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই সূত্র মতে, থানায় আটকে রেখে ছাত্রলীগের নেতাদের মারধরের ঘটনায় সবার আগে থানায় গেছেন এডিসি শাহেন শাহ। কিন্তু ওই সময় সবাই তাকে অনুরোধ করার পরও তিনি কোনো ভূমিকা না রেখে ওসির রুমে চুপচাপ বসেছিলেন। তাকে তদন্ত কমিটিতে দেখে অনেক সাক্ষীই অস্বস্তিতে পড়ে যান এবং সত্য ঘটনা তদন্ত কমিটির সামনে প্রকাশ না করে নিজেকে রক্ষা করেন।

ঘটনার এক সাক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অপরাধ যদি হয় পুলিশের কর্মকর্তার আর সাক্ষী যদি হন ইন্সপেক্টর কিংবা এসআই, তাহলে তো নীরব থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এ পরিস্থিতিতে আসল ঘটনা বললে পরে এর জের ধরে বড় ক্ষতি হতে পারে। এডিসি শাহেন শাহ তদন্ত কমিটিতে না থাকলে শাহবাগ থানা ও বারডেমের অনেক সত্য ঘটনাই তদন্ত কমিটির সামনে আসত বলে দাবি করেন এই পুলিশ সদস্য। 

এ সম্পর্কে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অন্য একটা কাজে ছিলাম। তখন ডিসি স্যার আমাকে কল দিয়ে শাহবাগ থানায় যেতে বলেন। আমি থানায় পৌঁছানোর আগেই মারামারির ঘটনা শেষ হয়ে যায়।’ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন তিনি। 

হারুনের জন্য চিকিৎসকের সিরিয়াল নেন দুই থানার ওসি

ঘটনার দিন ডিএমপির এডিসি সানজিদা আফরিন নিজের জন্য ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের কোনো চিকিৎসকের সিরিয়াল নেননি। এমনকি তার কথা বলেও কোনো চিকিৎসকের সিরিয়াল নেওয়া হয়নি। এডিসি হারুন নিজের কথা বলে শাহবাগ ও রমনা থানার ওসিকে চিকিৎসকের সিরিয়াল নিতে বলেন। 

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, ওই দিন দুপুরে এডিসি হারুন প্রথমে শাহবাগ থানার ওসিকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসকের সিরিয়াল নিতে বলেন। শাহবাগ থানার ওসি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানকে কল দেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ততার কারণে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে এডিসি হারুন রমনা থানার ওসিকে কল দিয়ে ডাক্তারের সিরিয়াল নিতে বলেন। তিনি ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তারের সিরিয়াল নেন। রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন, ‘সিরিয়াল নিয়ে দেওয়ার পর কী ঘটেছে, তা আমার জানা নেই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা