× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পিপিআর রোগ নির্মূল প্রকল্প

সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ক্রয়ে অনিয়ম

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৩৩ এএম

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২৪ এএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ছাগলের জন্য পেস্টেডেস পেটিস রুমিনান্টস (পিপিআর) ভ্যাকসিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শর্ত লঙ্ঘন করে অনভিজ্ঞ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ক্রয় করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি পুশ প্রতিবেদন পাওয়ার এক মাস আগেই তড়িঘড়ি পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারের বিল।

নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ছাগলের পিপিআর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। রিন্ডারপেস্ট নামক এক ধরনের ভাইরাস ছাগল, ভেড়া, দুম্বাজাতীয় গৃহপালিত পশুকে আক্রমণ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ ছাগলের মৃত্যু হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘পিপিআর রোগ নির্মূল ও খুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প’র মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর মৃত্যু প্রতিরোধে প্রতিবছর ভ্যাকসিন কিনে থাকে। 

গত বছরের ১০ নভেম্বর দেশের ৬৪ জেলায় ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে শর্ত ছিল তিন বছরের মধ্যে কমপক্ষে দুই দফায় ৩০ কোটি টাকা বা তারও বেশি মূল্যের ভ্যাকসিন বা ভেটেরিনারি ওষুধ সফলতার সঙ্গে সরবরাহ করেছে, এমন প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক কৌশলে তার পছন্দের ৪টি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন। আর এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় ‘ননরেসপন্সিভ’ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ডাকা দরপত্রের পিডি তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান মেসার্স টেকনো ড্রাগসকে দিতে বেশকিছু শর্ত পরিবর্তন করা হয়। কারণ টেকনো ড্রাগস নামক প্রতিষ্ঠানটির দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভেটেরিনারি ওষুধ বা ভ্যাকসিন সরবরাহের অভিজ্ঞতা ছিল না। এ কারণে দ্বিতীয় দরপত্রে ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম সরবরাহ করার অভিজ্ঞতার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এছাড়া প্রথম দরপত্রে ৩ বছরে ৩০ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ও ভেটেরিনারি মেডিসিন সরবরাহের অভিজ্ঞতার শর্ত দ্বিতীয় দরপত্রে রাখাই হয়নি।

দরপত্রে শর্ত ছিল ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ন্যূনতম চাহিদাকৃত ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু টেকনো ড্রাগস নেপালের হোস্টার নামে যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পিপিআর ভ্যাকসিন আমদানি করেছে, তাদের সেই পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল না। তাই জালিয়াতির উদ্দেশ্যে প্রকল্প পরিচালক প্রথমবার আড়াই কোটি ডোজ এবং দ্বিতীয় দফায় ২ কোটি ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার বিষয়টি কৌশলে যুক্ত করে দেন। এ ছাড়া দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হোস্টার কোম্পানির ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। হোস্টার নামক প্রতিষ্ঠানটির ফ্রিসেল সনদ থাকা জরুরি ছিল, কিন্তু তাদের সেই সনদও ছিল না। 

দরপত্রে পিপিআর ভ্যাকসিনের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক সেটা না করে বিভাগীয় ল্যাবে (পশু হাসপাতালে) নমুনা পরীক্ষা করান। সেখানে প্রভাব খাটিয়ে নমুনা অনুমোদন করানোর মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পিপিআর ভ্যাকসিন পরীক্ষা সম্পন্ন করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন নিয়ে নেওয়া হয়। দরপত্রে উল্লেখিত মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা না করেই প্রথম দফায় সরবরাহ করা আড়াই কোটি ভ্যাকসিনের বিল ১২ কোটি টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া টেকনো ড্রাগের সরবরাহ করা ভ্যাকসিন যথাযথ বা কার্যকর কি না সেটা ছাগলের শরীরে ‍পুশ রিপোর্ট নিতে হবে। পুশ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ডিবির অনুরোধে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ১৩ আগস্ট সাভারে সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সাভারের সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ গত ২০ আগস্ট একটি প্রতিবেদন পাঠান। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার কর্তৃপক্ষের পুশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের পরিচালকসহ অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিবেদন পাওয়ার এক মাস আগেই বিল পরিশোধ করা হয়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাগলের পিপিআর রোগ নির্মূলের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংগ্রহ করা ভ্যাকসিন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় নিম্নমানের বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ একাধিক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। 

পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ে অনিয়ম বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ডা. অমর জ্যোতি চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা তদন্ত করে দেখব। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা