× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এবার নন-ক্যাডার পুলিশও চায় সুপারনিউমারি পদ

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০০ পিএম

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

এবার সুপারনিউমারি পদের দাবি তুলেছেন নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরাও। বিসিএস পুলিশ ক্যাডার পদে অনেক আগেই সুপারনিউমারি পদোন্নতি চলে আসছে। বর্তমানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪) ও পুলিশ সুপার (গ্রেড-৫) পদে ১৩০টি করে মোট ২৬০টি সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু পদ না থাকায় নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা (কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক) পদোন্নতি যোগ্য হওয়ার পরও পদোন্নতি পান না। এমনকি পদ থাকার পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না উপপরিদর্শক (এসআই) ও পরিদর্শকরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এসব নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্য। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আইজিপির সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন। আবেদন জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে। প্রসঙ্গত, সুপারনিউমারি পদে পদোন্নতি বলতে বোঝায় অর্থ উদ্বৃত্ত ঘোষিত কর্মচারীর বেতন, ভাতা ও এতদসংক্রান্ত সুবিধা প্রদানের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃজিত পদে পদোন্নতি।

এ বিষয়ে নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সুপারনিউমারি শুধু ক্যাডার কর্মকর্তা এসপি, ডিআইজিদের জন্য হবে কেন? এসআই থেকে পরিদর্শকদের দিতে সমস্যা কোথায়? একই দায়িত্ব পালন করলেও বেতন স্কেলে পরিবর্তন হয় না আবার অতিরিক্ত অর্থও লাগে না, তাই মাঠ পুলিশের এই দাবি যৌক্তিক বলেও মনে করেন তারা। 

পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরাসরি মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা বা সদস্যদের যথাসময়ে হচ্ছে না পদোন্নতি। বছরের পর বছর পদোন্নতি না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে মাঠ পুলিশে। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে মঞ্জুরিকৃত মোট পদের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬৫২টি। এর মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি থেকে আইজি) ৩ হাজার ১২৪ জন। নন-ক্যাডার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। প্রায় দুই লাখ পুলিশের মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য হাজার হাজার পুলিশ সদস্যের পদোন্নতি হচ্ছে না। 

পদোন্নতি জটিলতা নিরসনে পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপমহাপরিদর্শকদের (ডিআইজি) জন্য অনেক আগেই সুপারনিউমারি পদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলতি মাসেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপির ১৩০টি করে সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টির সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এখন বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু সেখানে সেই সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) ও সাব-ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্টসহ নন-ক্যাডার সদস্যরা। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে ৬ হাজার ৮৯৮ জন ইন্সপেক্টর কর্মরত। তাদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতিযোগ্য। কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। বরং কিছুদিন আগে এএসপি পদের সংখ্যা কমানো হয়েছে। আবার ২৪ হাজার ৪২৯ জন এসআই ও সার্জেন্টের মধ্যে বিপুলসংখ্যক সদস্য রয়েছেন পরিদর্শক পদে পদোন্নতিযোগ্য। 

তাদের অভিযোগ, দেড় হাজারের বেশি সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ। পদ খালি থাকলেও তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। অনেকের চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতি মিলছে না। যে পদে চাকরিতে যোগ দেন সে পদ থেকেই অবসরে চলে যান এমন পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও কম নয়।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম জানান, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি জটিলতার বিষয়টি নিরসন করতে আমরা ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশকে জানিয়েছি। তাকে বলেছি আমাদের দিকটা দেখেন। ক্যাডার কর্মকর্তাদের ১৫ বছরে তিন থেকে চারটি পদোন্নতি হয়; অথচ আমরা বরাবরই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছি। আমাদের চাকরির মেয়াদ ৩০ বছর। এর মধ্যে এসআই পদেই কেটে যায় ১৫ থেকে ২৫ বছর। কেউ কেউ পরিদর্শক পদে ১৫ থেকে ২০ বছর সফলতার সঙ্গে চাকরি করেও পদোন্নতি পান না। এক হাজারের বেশি পরিদর্শক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে প্রমোশন লিস্টে (পিএল) আছেন। তিনি আরও বলেন, ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি জটিলতা নিরসনে সুপারনিউমারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ আমাদের কোটা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হয় না। আমরা চাই কোটা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হোক এবং পাশাপাশি যারা পদোন্নতিযোগ্য তাদের পদোন্নতি দিতে সুপারনিউমারি পদ সৃজন করা হোক। 

পুলিশের একাধিক পরিদর্শক বলেন, আমরা নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। সরকারি অন্য চাকরিজীবীরা এই গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেলে তাদের গ্রেড পরিবর্তন হয়ে ষষ্ঠ গ্রেড হয়। অথচ আমাদের এএসপি পদে পদোন্নতি হলেও গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ এএসপিরাও নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা একই পদে ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় কর্মরত থাকলে তার গ্রেড পরিবর্তন হবে। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে সাধারণত সেটা হয় না। তারা আরও বলেন পরিদর্শক থেকে এএসপি হিসেবে পদোন্নতির জন্য ৩৩ ভাগ কোটা থাকলেও গত তিন বছরে মাত্র ৩০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক সার্কুলারে সরাসরি এএসপি পদে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ।

জানা গেছে, সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে আইজিপির সঙ্গে বিশেষ কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রস্তাব করা হয় পরিদর্শকরা নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পাওয়ায় ষষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য, কিন্তু তারা নবম গ্রেডেই থেকে যান। আইজিপি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করতে বলেন। 

জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে উন্নীত করা হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতির পরও নবম গ্রেডে থেকে যান। যেমন ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৫ পুলিশ পরিদর্শকের পদোন্নতির আবেদনে প্রজ্ঞাপন সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন তুলে ধরা হয়। বলা হয়, পুলিশ পরিদর্শকদের নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি দেওয়ার পর নবম গ্রেডে থেকে যাওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আর এতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তার তুলনায় পুলিশ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

নন-ক্যাডার পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পুলিশের নন-ক্যাডারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ নেই। পুলিশ ক্যাডারে যারা পদোন্নতি পাচ্ছেন তারা নিয়মের মধ্যেই পাচ্ছেন। আমরা কাউকেই খাটো করে দেখছি না। 

সুপারনিউমারির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তা ছাড়া পরিদর্শকরা এ বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানায়নি। তারা আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা নিচের পদে পদোন্নতির জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে কয়েকবার সভা করেছি। আশা করছি বিষয়গুলো শিগগিরই সমাধান করা হবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহীদুল হক বলেন, নন-ক্যাডার পুলিশের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি জটিলতা নিরসনের জন্য সরকার চাইলে পদ সৃষ্টি করে উপপরিদর্শক ও পরিদর্শকদের জন্য পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে পারেন। আমি দায়িত্বে থাকার সময় বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জটিলতা কিছুটা নিরসন করেছি। সরকার চাইলে সুপারনিউমারিতেও অপেক্ষমাণ পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকদের পদোন্নতির আওতায় আনতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের বিসিএস ক্যাডারে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি হয়েছে। এখানে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। কারণ তারাই নির্বাচনের মাঠে বড় ভূমিকা রাখেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা