× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিভিকাস মনিটরের ওয়াচলিস্ট

মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির তালিকায় বাংলাদেশ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৮ পিএম

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৩৪ পিএম

মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির তালিকায় বাংলাদেশ

বিরোধী দল, অধিকারকর্মী ও সরকারের সমালোচকদের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে দমনপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক স্বাধীনতার পরিসর দ্রুত কমার দেশের তালিকায় (ওয়াচলিস্ট) বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক ওয়াচডগ সংস্থা সিভিকাস মনিটর। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) হালনাগাদ করা তালিকায় (ওয়াচলিস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গভিত্তিক নাগরিক অধিকার সংস্থাটি বাংলাদেশ ছাড়াও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ইকুয়েডর, সেনেগাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যুক্ত করেছে। এ বিষয়ে সংস্থাটি সংবাদমাধ্যমের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া তাদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সিভিকাস মনিটর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ২০২৪ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশে বিরোধী দল, অধিকারকর্মী ও ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে।

সিভিকাস মনিটর বিশ্বব্যাপী নাগরিক অধিকার ও সুশীল সমাজ নিয়ে কাজ করে। সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল বিএনপির সমর্থকদের নিশানা করা, আইনি ও অন্যান্য উপায়ে অধিকারকর্মী-সাংবাদিকদের চুপ করানোর চেষ্টাসহ ভিন্নমতকে দমনে যা কিছু করা দরকার, তা করতে উদ্যোগী বলে মনে হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেওয়া হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী বিএনপির সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হাজারো ভুয়া মামলা করেছে। পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে বিএনপির আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে দলটির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে, যাতে বিএনপির ৫০ জনের কর্মী আহত হয়েছেন। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপি রাজধানীতে কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। ওই সময় দলটির ৮০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, কর্মসূচিগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ পোশাকের (ধারণা করা হচ্ছে সরকার সমর্থকরা) লোকজন হাতুড়ি ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। বিএনপির দাবি, সে সময় অন্তত ৬০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে।

সিভিকাস মনিটরের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, ’বাংলাদেশ একটি বিপজ্জনক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা দেখছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দায়মুক্তির সঙ্গে বিরোধী দল ও সরকারের সমালোচকদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে। জানুয়ারিতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অবশ্যই মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এর মধ্যে প্রতিবাদ ও স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, সব রাজনৈতিক দলের কাজ করার জন্য নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার মতো বিষয় রয়েছে।

সিভিকাস মনিটরের হালনাগাদ ওয়াচলিস্ট বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার ব্যাপক অধোগতির ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরেছে। সংগঠনটি বিশ্বের ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলের নাগরিক স্বাধীনতার গতিপথ নজরে (ট্র্যাক) রাখে। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা গবেষণা অংশীদারদের সহায়তা নেয়।

সিভিকাস মনিটরের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, ’মানবাধিকার রক্ষকসহ সাংবাদিকদের হয়রানি ও দমনমূলক পরিবেশ বাংলাদেশে একটি শীতল প্রভাব তৈরি করেছে। এর ফলে অনেকেই কথা বলতে ভয় পায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। এই নিপীড়ন বন্ধে আহ্বান জানাতে হবে। নাগরিক ও গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিতে হবে।’

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নজরদারি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা, নির্বিচার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অধিকারকর্মীদের নিশানা করা হয়েছে। কেউ কেউ নির্যাতন, হামলা ও হত্যার শিকার হয়েছেন। 

এতে বলা হয়, চলতি মাসে ঢাকার একটি আদালত মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ সমালোচনাকারী সংবাদমাধ্যম বন্ধ, কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিচার, সাংবাদিকদের হয়রানি, নির্বিচারে আটকের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে চুপ করার চেষ্টা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে যে নতুন বিল আনা হয়েছে, তা আগের আইনের মতোই দমনমূলক।

এসব আইন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ও বিভিন্ন অধিকার সংস্থা উদ্বেগ জানিয়ে এর ব্যবহার স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। অথচ এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭০০০-এর বেশি মামলা হয়েছে।

শুধু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নয়, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমগুলোও সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার জন্য অনেক সাংবাদিককে অপরাধী বানানো হয়েছে। ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তত ৩৩৯ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জোরপূর্বক অপহরণ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে পদ্ধতিগত প্রতিবেদন দিয়েছে অধিকার সংস্থাগুলো। গত আগস্টে একগুচ্ছ মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, দেড় দশক ধরে সরকারি সংস্থাগুলো বিরোধী দল ও ভিন্নমতালম্বীদের জোরপূর্বক গুম করে চলেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অধিকারের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ সময় অন্তত ১৬ জন গুম হয়েছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের কেউ কেউ অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অনেককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কারও কারও সন্ত্রাসবাদের মতো অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব পরিবারের সদস্যরাও নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির কথা স্বীকার করেছেন।

জোসেফ বেনেডিক্ট আরও বলেন, ‘প্রতিটি মাস বাংলাদেশের নাগরিক পরিসরের ওপর একটি নতুন আক্রমণ নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে মনে হয়। আমি আদিলুর ও নাসিরকে অবিলম্বে-নিঃশর্তে মুক্তির পাশাপাশি অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সব নিয়ন্ত্রণমূলক আইন সংশোধনেরও আহ্বান জানাই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা