× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিগগিরই চালু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় মোটরযান পরীক্ষাকেন্দ্র

রাশেদুল হাসান

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫৮ পিএম

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৭ পিএম

স্বয়ংক্রিয় মোটরযান পরীক্ষাকেন্দ্র। প্রবা ফটো

স্বয়ংক্রিয় মোটরযান পরীক্ষাকেন্দ্র। প্রবা ফটো

একটি মোটরযান সড়কে চলার উপযোগী কি না তা জানতে কমবেশি ৬৪টি জিনিস পরীক্ষা করে দেখা হয়। এর বেশিরভাগ খালি চোখে পরীক্ষা করা যায় না। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সেটাই করছে। এতে পরিবেশদূষণকারী ও চলাচলের অযোগ্য যানবাহন সড়কে চলার অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনুমাননির্ভর এসব ফলাফল তৈরিতে সংশ্লিষ্টদের কারসাজি ও অবৈধ লেনদেনও হয়। এসব সমস্যা দূর করতে শিগগিরই বিআরটিএর মিরপুর-১৩ কার্যালয়ে চালু হচ্ছে একটি ১২ সারির স্বয়ংক্রিয় মোটরযান পরীক্ষাকেন্দ্র, যা ভিইসি নামে পরিচিত। 

বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, নতুন এ পরীক্ষাকেন্দ্রে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটরযানের হেডলাইট, গতি, ধোঁয়া, ব্রেক, সাসপেনশনসহ সব ধরনের ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। প্রতিটি ধাপের ফল আলাদাভাবে এবং চূড়ান্ত ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত করা হবে। পরে একটি কপি গ্রাহকের মেইলে চলে যাবে।

জানা যায়, ২০২১ সালে এ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৬ কোটি টাকা। আর যেসব যন্ত্রপাতি দরকার তা সরবরাহ ও পাঁচ বছর পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পেয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি। তাদের এ পাঁচ বছর মোট ১৫ লাখ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা বাবদ ১০৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। 

কর্মকর্তারা আরও জানান, পাঁচ বছর পর এ কেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাক্ষণের দায়িত্ব বিআরটিএ নিতে পারে বা আবারও খোলা দরপত্রের মাধ্যমে নতুন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারে। 

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, আগামী ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০টি বিভিন্ন প্রকারের গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করানো যাবে। তিনি আরও বলেন, এ কেন্দ্রের মাধ্যমে ফিটনেস প্রদান করা হলে মোটরযান থেকে পরিবেশদূষণ হ্রাস করা সম্ভব হবে। ত্রুটিযুক্ত যানবাহন ফিটনেস সনদ পাবে না, ফলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে এবং সিস্টেমে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিআরটিএর চাহিদা রিপোর্টিং সিস্টেম তৈরি ও চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা যাবে। সিস্টেমটি অনলাইন ওয়েববেজড হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যবহুল ড্যাশবোর্ড এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা যেকোনো স্থান থেকে মনিটরিং করা যাবে।

সার্কেল ৭১টি, পরীক্ষাকেন্দ্র মাত্র একটি 

১৯৬২ সালে সুপারিনটেনডেন্ট অব রোড ট্রান্সপোর্ট মেইনটেন্যান্স নামে যাত্রা শুরু হয় বিআরটিএর। ১৯৭৭ সালে এটি ডাইরেক্টরেট অব রোড ট্রান্সপোর্ট মেইনটেন্যান্স নামকরণ করা হয়। পরে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর অধ্যায় ২ দ্বারা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নামকরণ করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে এ নামে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। এটি দেশের পরিবহন খাত ও সড়ক নিরাপত্তার মধ্যে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।

সংস্থাটির তথ্য মতে, দেশে (আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত) মোট ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার নিবন্ধিত  মোটরযান আছে। এসব মোটরযানের মধ্যে প্রতিটি ভারী যানের বার্ষিক ফিটনেস ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা, পরিদর্শন ফি ৫০০ টাকা ও সনদ প্রতিলিপি ফি ৩০০ টাকা। আর অন্য যানের বার্ষিক ফিটনেস ফি ৮০০ টাকা, পরিদর্শন ফি ৫০০ টাকা ও সনদ প্রতিলিপি ফি ৩০০ টাকা।

বিআরটিএর ৭১টি সার্কেল অফিসে মোটরযানের ফিটনেস করানো হয়। সব সার্কেলের গ্রাহক ফি দিয়ে ফিটনেস করালেও মাত্র একটি কার্যালয়ের গ্রাহক এ স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা কেন্দ্রে সুবিধা পাবেন।

সংস্থাটি গ্রাহকদের থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু ঢাকাকেই প্রাধান্য দেয়। সংস্থাটির তথ্য মতে, তারা গ্রাহকের কাছ থেকে কর ও ফি বাবদ ২০২১-২২ সালে ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, আসলে এ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জমি না থাকায় এ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি জেলা ও সার্কেলে একটি ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার ও একটি মাল্টিপারপাস অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের জন্য ৪ একর করে জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আট জেলায় ভিআইসি নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। আরও ১২ জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। একে একে সব জেলাতেই এটি করা হবে।’

নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে ফিটনেস পরীক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে, আর ঢাকার ইকুরিয়া, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে হবে সরকারের অর্থায়নে। এসব স্থানে তিন লেনের পরীক্ষাকেন্দ্র হবে। ইতোমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’

পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন 

বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকায় রাজধানীর মিরপুর ও ইকুরিয়া, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও তা এক দিনের জন্যও ব্যবহার করা যায়নি। তারা আরও জানান, ২০১৬ সালে মিরপুর কার্যালয়ের অকার্যকর কেন্দ্রটি কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির সহায়তা নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে চালু করা হয়। কিন্তু চালুর কয়েক দিন পর আবার অকার্যকর হয়ে যায়। অকার্যকর কেন্দ্রে যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও কার্যকর করতে দুই দফা খোলা দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই এসব সরবরাহে আগ্রহী দেখায়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আসলে দুটি কারণে এ কেন্দ্রগুলো অকার্যকর হয়েছে। প্রথমত, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অদক্ষতা আর দ্বিতীয়ত হলো নষ্ট যন্ত্রাংশের দুর্লভ্যতা। পাশাপাশি এটি পরিচালনার পর্যাপ্ত জনবলের অভাব আছে। তিনি বলেন, ‘এবারে নতুন পরীক্ষাকেন্দ্র পরিচালনার জন্য সিএনএস নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা পাঁচ বছর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তাদের কর্মীরা আউটসোর্সিং হিসেবে কাজ করবে। এ সময়ে বিআরটিএর কর্মীরা কিছু না শিখলে আবার টেন্ডারের মাধ্যমে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’

কেন নিজস্ব জনবল দিয়ে এ কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পরিচালনা করতে ২০০ জন লোক দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ২০ জন।’ 

নতুন পরীক্ষাকেন্দ্র আগের মতো হবে কি না, জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার সব চায়নিজ যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। এবার সমস্যা হবে না।’ 

সমাধান যেভাবে করা যায় 

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক মনে করেন, যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার জন্য বিআরটিএর নিজস্ব পরীক্ষাকেন্দ্র ও জনবল থাকতে হবেÑ এমন কোনো কথা নেই। সংস্থাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এ কাজ করাতে পারে। তিনি বলেন, ‘জমি কেনা, ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি বসানো, লোকবল নিয়োগ এসব কিছুই করার দরকার নেই বিআরটিএর। তারা শুধু কিছু বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়ে তাদের মাধ্যমে এসব কাজ করালে দুর্নীতি কমবে এবং কাজটাও টেকসই হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এভাবেই কাজটি করা হয়। যত আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল দরকার তা কোম্পানি দেখবে। আর বিআরটিএ শুধু পলিসি তৈরি করবে ও কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে।’ 

তিনি জানান, ২০০৫ সালে কিছু বেসরকারি কোম্পানি সরকারকে এ প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মোটরযান পরিদর্শকদের আপত্তিতে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা