এডিসি হারুনকাণ্ড
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৯ এএম
বাঁয়ে রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব আজিজুল হক মামুন ও ডানে এডিসি হারুন অর রশীদ। ছবি কোলাজ
২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। সেই খবরের শিরোনাম ছিল ‘ইবি ছাত্রলীগ নেতার কাছে অস্ত্র চালানো শিখছেন শিক্ষক’। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে অস্ত্র তাক করা যে ব্যক্তির ছবি ছাপা হয় তিনি আজিজুল হক মামুন। তখন তিনি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের (ইবি) গণিত বিভাগের শিক্ষক। পরে বিসিএস ক্যাডার (অর্থনীতি) হন। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)।
সেই আজিজুল হক মামুন আবার খবরের শিরোনাম। তার স্ত্রী এডিসি সানজিদা আফরিন ও এডিসি হারুন অর রশীদকে ঘিরে সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে বিবাদের জেরে আলোচনার কেন্দ্রে এখন তিনি। বিবাদে জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানা হেফাজতে মারধরের ঘটনা নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চললেও মুখ খুলছেন না আজিজুল হক মামুন। গণমাধ্যমও সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলছেন তিনি।
এপিএস মামুনের স্ত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন ৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা। জানা যাচ্ছে, সানজিদার সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশীদের সম্পর্কের জের ধরে মামুনের বিরোধের সূত্রপাত। সানজিদার দাবি, মামুন ও তার সহযোগী দুই ছাত্রলীগ নেতা প্রথমে হারুনকে মারধর করেন। পরে হারুন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে মারধর করেন। ওই ঘটনায় হারুনকে সাময়িক বরখাস্তের পর রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। গতকাল ছিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষ দিন। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও পাঁচ দিন সময় চেয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর গত রবিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ে তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে কমিটি সময় বাড়ানোর জন্য গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি কমিশনার প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। অন্য সদস্যরা হলেনÑ ডিএমপির নিউ মার্কেট অঞ্চলের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ ও ডিবির মতিঝিল অঞ্চলের এডিসি রফিকুল ইসলাম।
থানা হেফাজতে নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ওসির (তদন্ত) কক্ষে এই মারধরে নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের আজিজুল ও পুলিশের এডিসি হারুন দুজনই ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
আজিজুল হক মামুন এর আগেও সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। আজিজুল ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
আজিজুলের স্ত্রী সানজিদা গণমাধ্যমকে বলেছেন, তার স্বামী আজিজুলই আগে হারুনকে মারধর করেছেন। ওই সময় সানজিদা ও হারুনের ভিডিও ধারণ করেন আজিজুল ও তার সঙ্গের লোকজন। বুকে ব্যথা থাকায় তিনি চিকিৎসক দেখাতে বারডেম হাসপাতালে যান। সেখানে ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য হারুনের সহযোগিতা নেন। কিন্তু তার স্বামী হঠাৎ সেখানে গিয়ে হারুনের ওপর হামলা করেন।
গত শনিবারের ওই ঘটনার পর থেকে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি আজিজুল হক মামুন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সানজিদাকে নিয়ে আজিজুল ও হারুনের কথিত বিরোধে কেউ আজিজুলের পক্ষ নিতে চাইছেন না। তার পূর্বের কর্মকাণ্ডের কারণে প্রশাসনের লোকজনও তার ওপর ক্ষুব্ধ।
সানজিদার বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি : কমিশনার
ডিএমপির ক্রাইম ডিভিশনে কর্মরত এডিসি সানজিদা আফরিনের একটি সাক্ষাৎকার গত মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে আমাদের এডিসি হারুন অর রশীদ ও পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বাড়াবাড়ি করেছেন। সানজিদার সঙ্গে আমি কথা বলিনি। ঘটনা নিয়ে সানজিদা বক্তব্য দিয়ে ঠিক করেনি। কারণ অনুমতি ছাড়া তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।
নিরাপত্তা কর্মকর্তার চিঠিতে ঘটনার বিবরণ
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে মারধর করার আগে গত শনিবার রাতে বারডেম হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। সেই ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করে চিঠি দেন তিনি। তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দুই পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন।’
চিঠিতে ওয়ারেছ আলী বলেন, ‘মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে তারা পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অনুরোধ করলে তারা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস (একান্ত সহকারী সচিব আজিজুল হক) এবং অন্যজন হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।