মাখোঁর ঢাকা সফর
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৫ এএম
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ছবি : ফোকাস বাংলা
সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফর শেষ করে ফিরে গেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা পৌঁছানোর পর থেকে মাত্র ১৯ ঘণ্টা অবস্থানের সময় তার ব্যতিক্রমী সফরসূচি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ঢাকায় নেমে নৈশভোজের আগে বক্তৃতায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের কয়েকটি লাইন উচ্চারণ করে সবাইকে আবেগাপ্লুত করেন তিনি। নৈশভোজের পর গান শুনতে ছুটে যান ‘জলের গানের’ শিল্পী রাহুল আনন্দের বাসায়। পরদিন সকালে ধানমন্ডি লেকে হেঁটে, নৌকায় তুরাগ নদে ভ্রমণ করে, ফুটপাথে দোকানির কাছ থেকে শিঙাড়া নিয়ে, সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে শাশ্বত বাঙালির হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই নেতা।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রশংসা করে এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে তার স্থান ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে।’ পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ-ও বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বর্তমানে নতুন এক সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি। আমরা তাই গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে একটি তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই; যেখানে আমাদের কোনো অংশীদারকে খাটো করা হবে না বা তাদের কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে না।’ মাখোঁর এই বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় বিশ্বপ্রভাব ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গতকাল সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন মাখোঁ। পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং সেখানে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা ও এমানুয়েল মাখোঁ একটি ফটো সেশনেও অংশ নেন।
দুই নেতার উপস্থিতিতে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। তারা জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। পরে তারা যৌথ প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছেড়ে আসার আগে সেখানে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন মাখোঁ।
এর আগে ১৯৯০ সালের ২০-২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট এ দেশ সফরে এলেন। বাংলাদেশে মাখোঁর এটিই প্রথম সফর। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ১৯৯০ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪.৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স পঞ্চমতম দেশ। ফরাসি বিভিন্ন কোম্পানি এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, জ্বালানি, অ্যারোস্পেস এবং ওয়াটার সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতে জড়িত।
গতকাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ও ফরাসি রাষ্ট্রপ্রধান যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবেÑ দুই দেশের সরকার এমনই আশা করছে। তিনি বলেন, চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স।’
শেখ হাসিনা এ সময় এমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বে সফররত ফ্রান্সের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহাসিক দিন আজ। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, আজ তা একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার এই নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা উভয়েই আশাবাদী।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসনÑ এই নতুন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় ফ্রান্স সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে আস্থা প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে দেশটি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।’ এজন্য শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নেতৃত্বাধীন ফ্রান্স সরকার ও সেখানকার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মাখোঁর এই সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা কিছু সমঝোতায় পৌঁছতেও সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনে ফ্রান্সের আহ্বানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। এ ছাড়া ফ্রান্সের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই সফরের সামগ্রিক বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।’
যৌথ ব্রিফিংয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘ইউরোপীয় অ্যারোনটিকসে আস্থা রাখার জন্য এবং ১০টি এ-৩৫২ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এয়ারবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড। ফ্রান্স বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’ জ্বালানি ও সামরিক খাতের পাশাপাশি সংস্কৃতি, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও ফ্রান্সের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মাখোঁ বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ‘অসাধারণ সাফল্য’ অর্জন করেছে, বিশ্বমঞ্চে তার স্থান ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বিশ্বের অষ্টম জনবহুল এই দেশটি তাদের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল রেখেছে। এ প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়া এখন ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করতে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা এবং টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে এই পথে চলতে চাই।’
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফ্রান্স দেশটির ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে ‘শক্তিশালী’ করতে এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বা ‘নতুন সাম্রাজ্যবাদ’ প্রতিরোধের লক্ষ্যে বর্তমানে বিভিন্ন দেশ সফর করছে। দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এএফপি বলছে, মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আগে থেকেই ইন্দো-প্যাসিফিকের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মাখোঁ ফ্রান্সকে এক্ষেত্রে একটি বিকল্প হিসেবে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে।
বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ঢাকা ও প্যারিস। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র দুটি স্বাক্ষর করে বিনিময় করা হয়। ইআরডি সচিব শরিফা খান ও এজেন্স ফ্রান্সেইস দো ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর বোনুই শসেত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও স্পেস সিস্টেম, এয়ারবাসের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ভেসভাল।
চুক্তি দুটির একটি হলোÑ ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট সংস্থার (এএফডি) মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট। আরেকটি হলোÑ বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) চুক্তি।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর মাখোঁ দুই দিনের সরকারি সফরে গত রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। মাখোঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। এ সময় গার্ড পরিদর্শন করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর এই ঢাকা সফর অন্য যেকোনো ভিভিআইপি কিংবা প্রেসিডেন্টের সফরের চেয়ে ভিন্ন ছিল। অনেকটা স্বল্প সময়ের নোটিসে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। কিন্তু ঢাকায় আসার পর তার কার্যক্রমগুলো ছিল সাধারণভাবে অন্য যেকোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরসূচির চেয়ে আলাদা। দুদিনের সফরে গত রবিবার রাতে দিল্লি থেকে তিনি ঢাকা আসেন। ঢাকায় পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রথাগতভাবে প্রটোকল অনুযায়ী ওই রাতেই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
এরপরই নিজস্ব কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রবিবার রাত প্রায় ১২টার দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট চলে যান রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায়। সেখানে অবস্থান করেন প্রায় ২ ঘণ্টা। ওই সময় শিল্পীর গান শোনেন তিনি। রাহুল আনন্দ যে একতারা বাজিয়ে গান শোনান, সেটি উপহার দেন এমানুয়েল মাখোঁকে। তিনি তা হাতে নিয়ে বাজানোর চেষ্টাও করেন।
পরদিন অর্থাৎ গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে লেকের পাড় দিয়ে হাঁটেন তিনি। ঘুরে ঘুরে দেখেন লেকের সৌন্দর্য। এরপর চলে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে। বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দুপুরে ঢাকা ত্যাগের আগে তুরাগপাড়ে যান মাখোঁ। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কিছুক্ষণ নদে ভ্রমণও করেন মাখোঁ।
প্রায় ১৯ ঘণ্টার সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গতকাল দুপুর ২টা ৪৮ মিনেটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানান।