জরিপ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৫ পিএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০০ পিএম
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণসাক্ষরতা অভিযান’ পরিচালিত এক জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রবা ফটো
দেশে করোনা মহামারির প্রকোপের প্রভাব পড়ে শিক্ষাব্যবস্থায়। দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়গুলো খুলতে না পারায় পাঠদান ব্যাহত হয়। ধকল কাটিয়ে যখন সব স্বাভাবিক হতে শুরু করে, তখন শিক্ষার ঘাটতি মেটাতে দেওয়া হয়নি সরকারি বিশেষ কোনো সহায়তা। এতে শিখন ঘাটতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭১ শতাংশ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ পরিচালিত এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘মহামারি উত্তর শিক্ষা : স্কুল শিক্ষার পুনরুদ্ধার ও আগামীর অভিযাত্রা’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান, এডুকেশন ওয়াচের সম্পাদক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমদ, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
ভৌগোলিক এবং উন্নয়ন বৈচিত্র্য ও বিস্তার বিবেচনায় আটটি বিভাগের আটটি জেলা এবং ২১টি উপজেলা (সাত জেলার তিনটি করে উপজেলা), দুটি সিটি করপোরেশনে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার পর বিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল-এমনটি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ। একই কথা বলেছেন মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও এই অতিরিক্ত পাঠের গুণগতমান ও কার্যকারিতা নিরূপণ করা যায়নি। তবে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষক সপ্তাহে পাঁচদিন পর্যন্ত অতিরিক্ত পাঠদানের কথা উল্লেখ করেছেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, স্কুলে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৭১ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে; যা চলমান শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, স্কুলে অনুপস্থিতি বা অনিয়মিত উপস্থিতি বেড়েছে।
করোনার প্রকোপের পর অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং নির্ভরতা বেশি ছিল বলে উঠে এসেছে জরিপে। বলা হয়েছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে তাদের নির্ভরতা বেশি ছিল। অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরিংয়ের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।
আরও দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ প্রাথমিক ও ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী তাদের পাঠ এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাণিজ্যিক গাইড বই অনুসরণ করেছে। ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে ৬৬৯ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শিখনদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ৯০ মিনিটের পরীক্ষা নেয় গণসাক্ষরতা অভিযান। সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে অষ্টম শ্রেণির ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ৩৩ শতাংশ নম্বর অর্জন করতে পারেনি। নবম শ্রেণির ক্ষেত্রে এটি ছিল ২৬ দশিমিক ২ শতাংশ। ডি গ্রেড (৩৩ থেকে ৩৯ শতাংশ নম্বর) অর্জন করেছেন অষ্টম শ্রেণিতে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ও নবম শ্রেণিতে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
অষ্টম শ্রেণির সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে দুটি শ্রেণিতে ইংরেজি, বাংলা ও গণিতে মোট নম্বরের ২ দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্টের পার্থক্য ইঙ্গিত দেয় – মহামারিজনিত ভুল বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের শিখনের ওপর সামগ্রিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায়, ইংরেজিতে ৬৫ শতাংশ এবং ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফল অষ্টম শ্রেণির তুলনায় সামান্য ভালো।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ৮৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৭২ শতাংশ ও গণিতে ৬৫ শতাংশ পাস করেছে। মূল্যায়নে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে।
মূল্যায়নে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ছেলেদের মধ্যে এই হার ৬৮ শতাংশ। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মেয়ে ও ছেলেদের ৭৩ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে।
উভয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে হবিগঞ্জ জেলায়। সেখানে মোট পাসের হার ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ।