ফসিহ উদ্দীন মাহতাব
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২২ পিএম
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন। প্রবা ফটো
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে এসে ভুয়া জন্মসনদ নিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন। এরই মধ্যে তার বায়োডাটার চার বিষয়ের তথ্য চেয়ে এলজিইডির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেখ মোহাম্মদ মহসিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ২৭ তারিখ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের জন্মতারিখের জটিলতা নিরসনের জন্য নিম্নবর্ণিত তথ্যাদি জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। প্রধান প্রকৌশলীর যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে সেখ মোহাম্মদ মহসিনের এসএসসি সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, এলজিইডিতে প্রথম যোগদানের এলপিসির সত্যায়িত কপি, এলজিইডিতে যোগদানের পর প্রথম জ্যেষ্ঠতা তালিকার কপি এবং এলজিইডির প্রকৌশলীদের খসড়া জ্যেষ্ঠতার তালিকার ২০২১ সালের কপি চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও সেখ মোহাম্মদ মহসিনের চাকরির মেয়াদের শেষ সময়ে নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
তা ছাড়া সেখ মোহাম্মদ মহসিনের দায়িত্ব পালনকালে এলজিইডির আইইউজিআইপি, কোভিড ১৯ রেসপন্স, সুপার ব্রিজ, জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি না থাকা ও অনিয়ম-দুর্নীতি ও অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে এডিবি ও বিশ্বব্যাংক অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, সেখ মোহাম্মদ মহসিন ১৯৬৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালের ২২ জুন তিনি এলজিইডিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে ১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের জন্মসনদ দেখিয়ে তিনি আরও এক বছর চাকরিতে থাকার তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি এখনও মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি পাননি। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোও সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
সেখ মোহাম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে যে, তার সুপারিশে কিছু প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে জুনিয়র প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়োগ দিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। সুপার ব্রিজ প্রকল্পে সেলিম মিয়াকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েও পরে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে তিন মাসের মাথায় প্রত্যাহার করেছেন। এই প্রকল্পের মেয়াদ ৭ বছরে সম্পূর্ণ হয়েছে অথচ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এই প্রকল্পের ৯০০ কোটি টাকা গত অর্থবছরে ফেরত নিয়েছে।
কোভিড-১৯ রেসপন্স প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয় বান্দরবানের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল শাহাদাত মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানকে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি গত দুই বছরে মাত্র ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প মেয়াদ ছিল দুই বছর। সে প্রকল্প এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে এডিবির আইইউজিআইপি প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেককে। সেখানে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। প্রকল্পের কাজে অর্থ লোপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে চাকরির মেয়াদের শেষ পর্যায়ে বেপরোয়া নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নের ক্ষেত্রে তিনি ও তার সহযোগীরা একেকজনকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে বাধ্য করেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প/মাস্টাররোলে দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর নিয়োজিত থাকা প্রায় ৩ হাজার ৮৩২ জন কর্মচারীর চাকরি নিয়মিতকরণে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে ঘুষবাণিজ্য বহাল রাখতে নতুনভাবে সার্কুলার দিয়ে কর্মচারী নিয়োগের আয়োজন করছেন প্রধান প্রকৌশলী। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান ও মো. শরিফ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও তিনি অতিরিক্ত আরও ৩টি গাড়ি ব্যবহার করেন পরিবারের জন্য। গাড়িগুলো হচ্ছে, ঢাকা-মেট্রো-ঘ-২১-০২৮১, ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-১৪০৯, ঢাকা মেট্রো-গ ৩৯-৬৩১২ নম্বরের। এর একটি তার স্ত্রী লুবনা আলম চৌধুরী, একটি কন্যা ফাইরুজ বিনতে মহসিন এবং একটি তার আরেক কন্যা ফাররিন বিনতে মহসিন ব্যবহার করে থাকেন। এসব গাড়ির জ্বালানি, ড্রাইভারের বেতনসহ যাবতীয় খরচ এলজিইডি থেকে বহন করা হচ্ছে।