বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে বিবৃতি দেওয়া ১৬০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নীতিজ্ঞান বর্জিত বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কিছু মানুষ যারা সমাজের পরিচিত, সম্মানিত মানুষ। সেই মানুষগুলো আন্তর্জাতিকভাবেও সম্মান অর্জন করেছেন তিনি তাদের পক্ষ থেকেই যখন কোনো অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়, যখন কোনো দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নেয় তখন মানবতা লজ্জিত হয়। প্রতিটি সমাজেই কিছু মানুষ থাকে যারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত এবং তারা অনেকসময় নানাভাবে প্রলোভনের মুখে পড়ে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়। আমার ধারণা বাংলাদেশের একটি বিচার প্রক্রিয়াধীন বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১৬০ জন মানুষ যারা বিবৃতি প্রদান করেছেন তারা নীতিজ্ঞান বর্জিত কিছু মানুষ।
তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে আমার ধারণা তারা লবিস্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তাদেরকে হয়তো কোনো গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা কোনো রাজনৈতিক দল অথবা কোনো ব্যাক্তি তাদেরকে নিয়োগ করেছেন কিছু অর্থের বিনিময়ে। সে কারণেই তারা আজকে একটি দুর্নীতির পক্ষে, অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, যারা এই দেশে বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, যারা ‘করাপশন চার্জ’ ফেইস করেছেন তারাই সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এটি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি, বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা বাংলাদেশের যিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তিনি সকল ধরনের অন্যায় দাবি ও যেকোনো ধরনের অন্যায় হস্তক্ষেপ ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেই সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন, এক্ষেত্রেও তাই ঘটবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এই মামলাগুলো করেছে তারাই যারা ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সরকার তো তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। তাহলে কি কারণে না জেনে না বুঝে বিশ্ববরেণ্য ১৬০ জন ব্যক্তি বিবৃতি দিলেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কিস্তি বাকী পড়ায় তিনি দরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার সার্টিফিকেট মামলা করেছিলেন। সে সময় অনেক দরিদ্র মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। তিনি ১৩ হাজার মামলা করার পরও বিবৃতি দিয়েছেন আইনের চোখে সকলই সমান। তাহলে তিনি কি আইনের চোখে সমান নন? আমাদের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভকারী। কাজেই ইউনূসের অনৈতিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে যারা মামলা দায়ের করেছেন তাদেরও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে। আইনের উপর ভিত্তি করে এ মামলাগুলো ফয়সালা হবে সেটিই কাম্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের বিচারব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ড. ইউনূস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নোবেল বিজয়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা সেই বিবৃতিটিকে পড়েছেন কিনা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার প্রশ্ন আছে। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে স্থগিত করে দেওয়ার জন্য। যে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূস প্রায় ১২০০ কোটি টাকা শ্রমিকদের দেয়ার জন্য সময় আদালতে রায় হয়েছে। সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা তিনি ইতিমধ্যে প্রদান করেছেন। কর ফাঁকির জন্য ১২ কোটি টাকা তিনি প্রদান করেছেন। তিনি বিচার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছেন এবং বিচারব্যবস্থা মেনে নিয়ে তিনি যেখানে আপিল করার দরকার ছিল তিনি সেখানে আপিল করেছেন। তিনি যে ধরনের সুবিধা নেওয়ার দরকার ছিলো সেইসকল সুবিধা নিয়ে চলমান বিচার ব্যবস্থাকে বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দিয়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপরে চাপ প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন। একটি দেশের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থই হলো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আনা। আপনি কেন শহীদ মিনারে যান না, কেন স্মৃতিসৌধে যান না, কেন আপনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান না। এগুলো কি দেশ প্রেমের অংশ নয়। আপনার কি দেশপ্রেম আছে! যদি আপনার দেশ প্রেম থাকতো তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এতগুলো মানুষকে দিয়ে আপনি বিজ্ঞাপন দিতেন না। আপনার কাছে যদি ম্যাটারিয়ালস থাকতো তাহলে তো সেখানে খবর হত। অর্থ দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপানো ছাড়া আর কোনো প্রক্রিয়ায় আমরা আপনাকে অগ্রসর হতে দেখিনি। আপনাকে বলব, বাংলাদেশে সুবিচারের ব্যবস্থা এখনো রয়েছে। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। আপনি এদেশের সুবিধা গ্রহণ করে বড় হয়েছেন। আপনি এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাসহ শিক্ষক নেতারা বক্তব্য দেন।