× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৮.১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৬ এএম

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে বলা হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি দেশে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিষয়ে এমন একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের মধ্যে মোট দেশজ বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা অর্জিত হয়নি। অথচ এর বিপরীতে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, সেটি ঠিকই অর্জিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমন মূল্যায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ ভিত্তিবছরে দেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। পরিকল্পনার শেষ বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ৩২ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জন ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ওই অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু সরকারের হিসাবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়েও বেশি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অধিকাংশ খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

বিশ্লেষকরা জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অর্জন একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অন্যান্য সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যতিরেকে কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ফেলা সম্ভব নয়। সাধারণত ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য ন্যূনতম ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে প্রবৃদ্ধির এ স্বাভাবিক নিয়ম অনুসৃত হয়নি। ওই সময় ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ৪ শতাংশের কম বিনিয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিনিয়োগ কমলেও কীভাবে প্রবৃদ্ধি বেশি হয় সেটা জিইডি-ই বলতে পারবে। তবে আগে বিবিএস যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাব দিয়েছিল, তারা পরে সেখান থেকে সরে এসেছে। সেটা এখন তারা কমিয়ে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আর সরকারের তো বিনিয়োগে এমন কোনো মিরাকল হয়নি যে প্রবৃদ্ধি এত বাড়বে।’ 

আবার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জিত হয়নি। এর বিপরীতে সরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি বেসরকারি খাতনির্ভর হলেও বিনিয়োগ খরা কমাতে সরকারকে সরকারি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ বিনিয়োগ ২০১৯-২০ অর্থবছর নাগাদ ২৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা অর্জিত হয় ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আর এর আগের অর্থবছর ২৫ দশমিক ১ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিনিয়োগ হয় ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ ভিত্তিসময়ে এ বিনিয়োগ ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। পরিকল্পনার শেষ বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এদিকে অন্যান্য সূচকের ক্ষেত্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই অর্জিত হয়নি। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের প্রকৃত রপ্তানি আয় ছিল মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয় জিডিপির ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে ওই বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপি ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এর পরের কোনো অর্থবছরেই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। 

রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি ধস নামে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী কোভিড অতিমারি। ওই অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জিত হয় ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জিত হয় ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জিত হয় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

কর-জিডিপি অনুপাতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সপ্তম পরিকল্পনার কোনো বছরেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। পরিকল্পনার প্রথম বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপির বিপরীতে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এর বিপরীতে আহরণ হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর পরের অর্থবছর সাড়ে ১১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয় ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কর আহরণ হয় মাত্র ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পরের অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর বিপরীতে আহরণ হয় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কর আহরণ হয় ১১ দশমিক ২ শতাংশ।

এর বাইরে জাতীয় সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে মূল্যস্ফীতির যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল, তা সরকার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা