প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৩২ পিএম
রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাশেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রবা ফটো
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নতুন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, ‘তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বলেছেন। আমরা তাদের বলেছি যদি তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তাহলে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার।’
বুধবার (৩০ আগস্ট) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল সভা শেষে তিনি এসব কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক যে সংকট দেখা দিয়েছে তা সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারত্বের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগামীর সিংহভাগ বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। ফলে কিছু উন্নত অর্থনীতির দেশে আমাদের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হবে। কিন্তু জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থাগুলোও আমাদের পাশে থাকবে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আমাদের সক্ষমতা এবং অনুকূল পরিবেশের প্রতি আরও আস্থাশীল হবে। এই ধরনের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পারস্পরিক সুবিধার জন্য সহযোগিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, ‘বিচক্ষণ সরকারি নীতি এবং উন্মুক্ত বাজারের নেতৃত্বে বেসরকারি, রপ্তানিমুখী উৎপাদন, উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি এবং একটি ক্রমবর্ধমান পরিষেবা খাত আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে প্রায় ৭ শতাংশ গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর, পাওয়ার স্টেশন, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্যান্য মেগা-প্রকল্প এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেগুলো সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক উদ্যোগের অংশ তা রপ্তানি ও আমদানির দৃশ্যপটকে আমূল পরিবর্তন করছে। ফলে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে যখনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি হবে। ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে এটাই আমরা চাই। এ লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিয়ে বাজার মনিটরিং করে থাকি। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অনেককে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির লোকবল কম থাকার কারণে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।’
সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেন, তাহলে সহজেই বুঝা যায়, বিশ্ব একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বাজারেও যখন তিনটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না বলে রেস্ট্রিকশন দেয়, জার্মানির দোকানগুলোতে তেলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়, তখন আমাদের মতো দেশ এ সংকটের বাইরে থাকতে পারে না। মুহূর্তের মধ্যে হয়তো সমাধান হবে না, তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যাতে করে গ্লোবাল এই দুরবস্থার মধ্যে দেশের মানুষ ভালো থাকে।’
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমদ এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি অতুল কেসাব, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বক্তব্য দেন।