এম আর মাসফি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ০১:০৬ এএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৮ পিএম
বিদেশে দক্ষ শ্রমিক
পাঠানো ও দেশের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে তরুণদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
কর্মসংস্থানে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে
আরও ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
স্বল্প ও অর্ধশিক্ষিত তরুণদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে দেশে-বিদেশে
কর্মসংস্থান নিশ্চিতে ব্যয় করা হবে ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এ বছর শুরু হয়ে ২০২৮
সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট)
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন
দিয়েছেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি
ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পটির
মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় প্রকল্প পাসের সুপারিশ
করেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে বিদ্যমান টিটিসিগুলোর মানোন্নয়ন না করে নতুন করে
সেন্টার স্থাপন না করার সুপারিশ করেছিল সরকারের প্রকল্প মনিটরিংয়ের একমাত্র
প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
সম্প্রতি সংস্থাটি ২৭টি
টিটিসি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, প্রশিক্ষণের বিষয় যুগোপযোগী ও
আধুনিক না হওয়া, ব্যবহারিকের সুযোগ না থাকা এবং প্রশিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায়
উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে এসব টিটিসি। প্রশিক্ষক সংকটে নিয়মিত ক্লাস না
হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়েও দেশে-বিদেশে কাজ মিলছে না। তাই
উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা। এ অবস্থায় সেন্টারগুলোর টিকে
থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএমইডির মূল্যায়ন
প্রতিবেদন বলছে, প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী কাজে যুক্ত
হলেও ৭০ শতাংশই কাজ না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। আর প্রথম বছর কোর্সগুলোয় ভালো
সাড়া পেলেও প্রত্যাশিত কাজ না পাওয়ায় ধীরে ধীরে তরুণদের আগ্রহ কমতে থাকে। এখন
টিকে থাকার জন্য কিছু কিছু টিটিসি হলরুম ভাড়া দেওয়া শুরু করেছে। বাকিদেরও একই পথ
ধরার পরামর্শ দিচ্ছে আইএমইডি। তাই নতুন করে আর সেন্টার নির্মাণ না করে
বিদ্যমানগুলো আধুনিকায়ন ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ সংস্থাটির।
আইএমইডির সুপারিশ না মেনে
প্রকল্পটি নেওয়ার বিষয়ে একনেক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে
বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ব্রিফিং শেষে একজন সচিব নাম
না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমার কাছেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ছিল। আগেরগুলো না
চললেও কেন নতুন করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দরকার। তারপরও অনুমোদন দেওয়া
হয়েছে।’
এত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার বিষয়ে
চিটাগাং ইউনিভার্সিটি সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসি সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল
মান্নান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যদি সঠিকভাবে পরিচালনা না করা যায় তাহলে এত
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই। ১০টা করলে সবই ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে।
আমাদের দেশে ভালো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে, তবে শুধু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
করে ফেলে রাখলে চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা
প্রশিক্ষণ নিতে আসছে তারা সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় কাজ পাচ্ছে না। তাই
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার আগে মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রকল্পটি নেওয়ার বিষয়ে
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে দক্ষতাভিত্তিক বৈদেশিক কর্মসংস্থানের
জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে টিটিসি নির্মাণের পরিকল্পনা
অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং
দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ মন্ত্রণালয় এ যাবৎ ১১০টি টিটিসি
নির্মাণ করেছে। আলোচ্য প্রকল্পে ১ম পর্যায়ে ৫০টি এবং ২য় পর্যায়ে ৫০টি টিটিসির
প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪৯৫টি উপজেলা বিদ্যমান। প্রতিটি উপজেলায় একটি
করে টিটিসি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরও ২৮৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষ
কর্মী বিদেশে পাঠানোর হার বৃদ্ধি পাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি
পাবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, ৫৬ কোটি টাকা পেয়ে ৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৪০ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৮১টি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩টি আসবাবপত্র ক্রয়, টিটিসির জন্য উপযুক্ত এবং কারিগরি দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং পিআইইউর জন্য একটি যানবাহন ক্রয়।