× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিত্যপণ্য

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এদেশে আর কমে না!

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৬ এএম

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৩:০৫ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে দেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব খাদ্যপণ্যের দামই আকাশছোঁয়া। বিশ্বের কোথাও কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, আমদানি হোক বা না হোক, দেশেও সেটির দাম সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো পণ্যের দাম কমলে সে অনুপাতে দাম আর কমানো হয় না। কখনও কমলেও তা কচ্ছপগতিতে কমে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় এত বেড়েছে যে, এগুলো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অথচ এই যুদ্ধের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে গত দেড় বছরে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দামই অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তা চলছে উল্টোরথে। 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে গত ৪ আগস্ট প্রকাশ পেয়েছে জুলাই মাসের (মাসভিত্তিক) খাদ্যমূল্য সূচক বা ফুড প্রাইজ ইনডেক্স (এফএফপিআই)। এই সূচক অনুযায়ী, বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকে চিনির দাম না কমলেও খাদ্য, মাংস, দুগ্ধ, দানাদার খাদ্য ও তেলের দাম কমে এসেছে। এফএফপিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। মাংসের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। দুগ্ধজাত পণ্যে কমেছে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ, দানাদার খাদ্যে ২১ দশমিক ৪ শতাংশ, ভোজ্য তেলে কমেছে শতাংশ ৩৯ এবং চিনিতে বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এগুলোর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামছে না কিছুতেই।

এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৪২ শতাংশ

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২৪২ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের জুলাই মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪৫-৫০ টাকা। বর্তমানে ৮০-৯০ টাকা। অর্থাৎ পণ্যটির দাম বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। দেশি রসুন বিক্রি হতো ৬০-৮০ টাকায়। বর্তমানে ২২০-২৬০ টাকা। এতে বেড়েছে ২৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রুই মাছের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ৩৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ৮৮-৯০ টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৮-১৩৫ টাকায়। সে হিসাবে দাম বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। 

এফএফপিআইয়ের হিসাবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৪১ দশমিক ২ শতাংশ, যা মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৯ দশমিক ৭ শতাংশে। মাংসের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১১৩ দশমিক ৯ শতাংশ; মার্চে তা উন্নীত হয় ১১৯ দশমিক ৩ শতাংশে। দুগ্ধজাত পণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৪১ দশমিক ৫ শতাংশ; মার্চে বেড়ে হয় ১৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। দানাদার খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক ছিল ১৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। মার্চে হয় ১৭০ দশমিক ১ শতাংশ। ভোজ্য তেলের মূল্যসূচক ২০১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে মার্চে উন্নীত হয় ২৫১ দশমিক ৮ শতাংশে। চিনির মূল্যসূচক ছিল ১১০ দশমিক ৫ শতাংশ; মার্চে বেড়ে হয় ১১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই মাসে বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ১৪০ দশমিক ৬ শতাংশ, মাংসে ১২৪ দশমিক ১ শতাংশ, দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ১৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ, দানাদার খাদ্যে ১৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ভোজ্য তেলে ১৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চিনির ক্ষেত্রে ১১২ দশমিক ৮ শতাংশ।

কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসে বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ১২৩ দশমিক ৯ শতাংশ নেমে আসে। একইভাবে নেমে আসে মাংসের ক্ষেত্রে ১১৭ দশমিক ৮ শতাংশ, দুগ্ধজাত পণ্যে ১১৬ দশমিক ৩ শতাংশ, দানাদার খাদ্যপণ্যে ১২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোজ্য তেলে ১২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক উন্নীত হয় ১৪৬ দশমিক ৩ শতাংশে।

নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের

আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম যেমনই হোক না কেন, দেশের মানুষ এর বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাদেরই একজন স্বর্ণালী আক্তার হিরা। বাজার করতে গিয়ে তার পা বারবার থেমে যায়। যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন, তাতে ফর্দের সবকিছুই কি কিনতে পারবেন? কেননা গত এক বছরে সাংসারিক ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচজনের সংসার তার। প্রতিদিন দুবেলা খাওয়ার জন্য ২ কেজি করে ধরলেও মাসে প্রয়োজন দেড় মণ চাল। ৫ কেজি তেল, ৪ কেজি ডাল, শাকসবজি, মাছ ও মাংস মিলে প্রায় ১৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয় তার। রাজধানীতে বসবাসকারী স্বর্ণালী বলেন, গত বছর এক কেজি আলু কেনা যেত ২০ টাকা দিয়ে। এবার তার দাম ৪৫-৫০ টাকা। চিনি ছিল ৮০ টাকা কেজি। এর দাম বর্তমানে ১৩৫-১৪০ টাকা। ৫০০ টাকায় যে মাছ পাওয়া যেত, এখন ১ হাজার টাকায়ও পাওয়া যায় না। আগে দুবেলা মাছ-মাংস খেতেন। এখন দুপুরে মাছ বা মাংস খেলেও রাতে খান না। রাতে খান ভাজি-ভর্তা দিয়ে। 

স্বর্ণালী আক্তার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। তাই দেশেও যদি দাম স্বাভাবিক হতো বা আগের অবস্থায় চলে আসত, তাহলে সবার জন্যই ভালো হতো। কেননা সব মানুষই নিত্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কষ্টে আছে।

বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও তার সুফল কেন পাওয়া যায় নাÑ এ প্রশ্নের উত্তরে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এটা আমাদের পোড়া কপাল। দেশের অর্থনীতির পরিচালকরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। আবার ব্যবসায়ীদের মুনাফাপ্রীতি অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে এখানে যত দ্রুত বাড়ে, কমলে আর সে রকম হয় না। গণমাধ্যমকে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশ্ন করতে হবে, এ অবস্থা থেকে কেন বের হওয়া যাচ্ছে না।’

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়লে দেশেও বাড়ে, কিন্তু কমলে আর সে রকম কেন ঘটে না?Ñ এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দামের ওঠানামার সম্পর্ক আছে বটে। কিন্তু দেশীয় কিছু বিষয়ও এখানে যুক্ত আছে। তিনি বলেন, ‘যে পণ্যের দাম বিদেশে কমেছে, সেটি আমাদের দেশে কতটা উৎপাদন ও আমদানি হয় তা বিবেচনায় নিতে হবে। যদি বেশি উৎপাদন হয়, তবে কম আমদানি করলেও চলবে। আর যদি কম উৎপাদন হয়, তবে বেশি আমদানি করতে হবে। এই পণ্যমূল্যের ওঠানামা বাজারকে বেশি প্রভাবিত করবে। আমদানি করা খাদ্যপণ্যে ডিউটি ও ট্যারিফ কম ধরা হয়। এটি আরও কমিয়ে দর কমানো সম্ভব। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার প্রায়ই অবমূল্যমান হচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমলেও আমাদের তেমন কাজে আসছে না। কেননা ডলারের বিপরীতে টাকার দামই কমে গেছে।’

বাজার বিশ্লেষক এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পণ্যমূল্যের দাম কমাতে হলে আরও কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হবে। যেমন কারা কতটুকু আমদানি ও বাজারজাত করল, তার সঠিক হিসাব রাখা প্রয়োজন। এজন্য সব তথ্য ডিজিটালাইজ করতে হবে। পণ্যভিত্তিক সকল ব্যবসায়ীর রেজিস্ট্রেশন রাখতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান কতটুকু আমদানির পর সরবরাহ করল, তার খোঁজ রাখতে হবে।’

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনকে তাদের কার্যক্রমে আরও গতিশীল ও কঠোর হতে হবে। যাতে কোনোভাবেই সিন্ডিকেট তৈরি না হয়। সম্প্রতি দুজন মন্ত্রী ‘সিন্ডিকেটকে’ শক্তিশালী আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এসব বলা যাবে না। সাময়িক কষ্ট বা দুর্ভোগÑ যেটিই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা