প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ২১:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
মূল বেতনের সঙ্গে
ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার পুরোনো নিয়ম বহাল রাখার দাবিতে রবিবার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কর্মসূচি স্থগিত
করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ের রানিং
স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ কার্যদিবস পেছানো হয়েছে
কর্মবিরতির কর্মসূচি। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধের যে ঘোষণা ছিল, তা আর থাকছে না। ট্রেন
স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
সন্ধ্যায়
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্বাস পেয়ে এ কর্মসূচি স্থগিত
করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের
পক্ষ থেকে আমাদের দাবি পূরণ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে আগামীকাল বিকালে
বৈঠক করবেন। তাই আমরা আগামী ১০ কার্য দিবস আমাদের কর্মবিরতি স্থগিত করেছি। কাল থেকে
ট্রেন চলাচল করবে।’
এর আগে গত ১ আগস্ট
অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার হিসাবে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স
যোগ না করলে আগামী ২৮ আগস্ট ট্রেন পরিচালনায় অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন রানিং স্টাফরা।
জানা যায়, ট্রেন
চালক (লোকো মাস্টার), সহকারী লোকোমাস্টার, ট্রেন পরিচালক ও ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের
(টিটিই) বলা হয় রানিং স্টাফ। বাংলাদেশ রেলওয়েতে জনবল সংকটের কারণে রানিং স্টাফরা মূল
কর্মঘণ্টার বাইরে গিয়ে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা কাজ করেন। অতিরিক্ত এ কাজের জন্য ব্রিটিশ
শাসনামল থেকে তারা অতিরক্তি অর্থ বা মাইলেজ পান। এই সুবিধায় প্রতি ৮ ঘণ্টার জন্য একদিনের
বেতনের সমপরিমাণ টাকা পেয়ে আসছেন তারা। রানিং কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ
মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণ করা হতো।
আরও জানা যায়, ২০২০ সালে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ বিভাগ জানায়, বেসামরিক কর্মচারীদের পেনশন ও পারিতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে অন্য কোন ভাতা হিসাব করার সুযোগ নেই বিধায় রেলওয়ের রানিং স্টাফদের রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশনও অনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।
সমিতির সাধারণ
সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানান, রেলমন্ত্রী ও রেল প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে
বহুবার বৈঠক করে আমাদের প্রাপ্যতার বিষয়ে আইনগত ভিত্তি, যুক্তি তুলে ধরলে কর্তৃপক্ষ
মাইলেজ সুবিধা বজায় রাখার জন্য অর্থ বিভাগকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ ২০২২
সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে ওই বছর
১০ এপ্রিল রানিং স্টাফরা সারাদেশে ট্রেন চলাচল
বন্ধ করে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়।
তিনি বলেন, ‘রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে
গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যা গত ১১ জুন রেলওয়ের
মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের নির্দেশ
দেন। কিন্তু আবারও গত ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে,
ফলে সমগ্র রেলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।’
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী
নুরুল ইসলাস সুজন গত শনিবার বলেন, ‘তাদের দাবি যুক্তিসংগত। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত। আমরা
অর্থ মন্ত্রনালয় বলেছি রেলের যেহেতু কর্মচারীরা দীর্ঘদিন পেয়ে আসছে তাই তাদেরকে এ সুবিধা
দিতে হবে। আমরা যখন নতুন নিয়োগ করবো তাদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম থাকবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর
মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে লিখিত কিছু হইনি। রানিং স্টাফরা চায় আদেশ প্রত্যাহার।’