কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:০৫ এএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৮ এএম
ফাইল ফটো
রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাÑ এ পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। এ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে ৭০টি দেশের সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধি যোগ দেবেন।
২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ‘ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্যা ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিকসের সদস্যদেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধানসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবারের সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সম্মেলনের আয়োজক দেশ ও ব্রিকসের চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট নতুন সদস্যদেশ যুক্ত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ব্রিকসে যোগ দিতে ২৩টি দেশ আবেদন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ আবেদন করেছে ২০২৩ সালে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বলেছেন- আমরা আটটির মতো দেশ বাড়াতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে।’
তবে এখনই বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিতে চায়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর অনেকগুলোই চাহিদামতো অর্থায়ন পাচ্ছে না। ব্রিকস এতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিকসে যোগদান না করলেও আমরা ইতোমধ্যে তাদের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত আছি। তারা আমাদের দুটি বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। আশা করছি, আগামীতে আরও প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন মিলবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “২০২০ সালের ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ‘ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগদান করে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছিলাম। সেখানে আমি ব্রিকস সদস্যদেশগুলোকে তাদের ব্যয়সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে হস্তান্তর এবং উদ্ধৃত অর্থ এ দেশগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। এ বছর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগদানের বিষয়ে আমাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছি।”
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া হতে ইন্দোনেশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরান, সৌদি আরব, সিরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের এ পর্যন্ত প্রায় ২০টিরও বেশি দেশ ব্রিকস জোটে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। ২৬ আগস্ট সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে জোহানেসবার্গ ত্যাগ করবেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী খুবই সীমিত। সর্বোচ্চ ১৪ জন। বাকি নিরাপত্তার লোকজন থাকবে। তবে কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি নেবেন। এ সংখ্যা জানা নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ ব্যস্ত সময় পার করবেন। ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিটে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য দেবেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকার দেশসমূহে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে’ অংশ নেবেন। একই দিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টসহ ব্রিকস সদস্যদেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারের রাষ্ট্রীয় ভোজসভায়ও অংশ নেবেন।
২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের ‘ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্যা ব্রিকস প্লাস ডায়ালগে’ অংশ নেবেন। এতে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত থাকবেন। এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সফর চলাকালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য আফ্রিকার অনেক দেশ অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা সেগুলো বিবেচনা করছি। এগুলোর সময় এখনও ঠিক হয়নি।’
ব্রিকসের সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশকে তারা বিবেচনায় রেখেছে। তবে এ মুহূর্তে নতুন সদস্য নেবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের তাড়াহুড়া নেই। ব্রিকসের রিজার্ভে ৫ ট্রিলিউন ডলার আছে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগ দিয়ে আমাদের লাভ হচ্ছে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে কয়েকটা প্রজেক্টও আমরা করছি। একটি এক্সপানডেড ঢাকা সিটি ওয়াটার সাপ্লাই রিজিল্যান্ট প্রজেক্টে ২৩৫ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। রিপ্লেসম্যান্ট অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট এক্সিটেন্ট গ্যাস নেটওয়ার্ক ইন ঢাকা অ্যান্ড নারায়ণগঞ্জ সিটি নামের প্রকল্পে সাড়ে সাতশ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাল্টিলেটারেল ম্যাকানিজমে বিশ্বাস করি। আমরা আসিয়ান, ওআইসিসহ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য। আফ্রিকাতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আফ্রিকার ৫৫টি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। সেখানে আমাদের অনেক সুযোগ আছে। মোজাম্বিকে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশিরা। আমরা গেলে সম্পর্ক শক্তিশালী হবে, সুবিধাও মিলবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সদস্য হলে এসডিজির জন্য সহযোগিতা ও সাহায্য প্রয়োজন। উন্নয়ন সহযোগীদেরও খুশি হওয়া উচিত। তাদের ওপর ভার কমবে। সদস্য কবে হব, জানি না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এক বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ আফ্রিকার দেশগুলোতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমাদের বাণিজ্য বাড়ানো অন্যতম দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। আফ্রিকায় এক্সপ্লোর করা হয়েছে। কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের অগ্রগতি আছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগও বাড়ছে।’
কতটুকু সফলতা অর্জন হয়েছেÑ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি; আমাদের সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার দুটি দেশ কেনিয়া ও রুয়ান্ডাতে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালসের বিনিয়োগ রয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যদি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ না হয় তবে আসছে সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি২০ সামিটে সাক্ষাৎ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রকে নয়াদিল্লির বার্তা প্রসঙ্গ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত যদি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কিছু বলে থাকে, নিশ্চয় তা এ অঞ্চলের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, ভারত সরকার অত্যন্ত পরিপক্ব ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ। তারা নিজেদের জন্য ও অন্যান্য আঞ্চলিক শান্তির জন্য কিছু বলে থাকলে এটা নিশ্চয় উপকারে আসবে।