× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিমানবন্দরে ‘পাখি আতঙ্কে’ পাইলটেরা!

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩ ২৩:৩৯ পিএম

আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৩ ০০:১৬ এএম

বোয়িং-৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজের চাকায় আটকে গেল পাখি। ফাইল ফটো

বোয়িং-৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজের চাকায় আটকে গেল পাখি। ফাইল ফটো

গত ১২ আগস্ট দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে উড্ডয়নের জন্য ছুটছিল রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৮৮ ফ্লাইট। হঠাৎই বোয়িং-৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজটিকে কড়া ব্রেক করেন পাইলট। এ ঘটনায় বিমানে থাকা ১৫৬ জন যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। জানা যায়, একটি বাজপাখির সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায় বিমানটির একটি চাকা ফেটে গেছে। পরে উড্ডয়ন বাতিল করে যাত্রীদের ট্যাক্সিওয়েতে নামানো হয়।

একই দিনে উড্ডয়নরত ফ্লাই দুবাইয়ের আরেকটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে পড়ে। এতে ইঞ্জিনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। তবে ১৮৫ জন যাত্রীর কোনো ক্ষতি হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অন্তত ২০টি উড়োজাহাজ পাখির আঘাতের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর বিমানের অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণের সময় ইঞ্জিনে পাখির আঘাত লাগে। পাইলটের দক্ষতায় যদিও বিমানটি ৮৭ জন যাত্রী নিয়ে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। তবে ওই উড়োজাহাজটি ক্ষতির কারণে গ্রাউন্ডেড করতে হয়। এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই বিমানটি অবতরণের সময় পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এভাবে শাহ আমানত, রাজশাহী ও কক্সবাজারে প্রায়ই উড়ন্ত পাখির সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষ হয়।

এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণে পাইলটরা পাখি আতঙ্কে ভুগছেন। বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় প্রচুর ঝোপ-জঙ্গল, গাছপালা ও জলাশয়। এগুলোতে পাখিদের প্রচুর খাবার রয়েছে। তা ছাড়া রানওয়ে এলাকায় পাখি তাড়াতে রয়েছে এক দল বার্ড শুটার। তবু প্রায়ই পাখির আঘাতের শিকার হচ্ছে উড়োজাহাজ।

আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের ৯০ শতাংশ ঘটনা বিমানবন্দরের আশপাশেই ঘটে থাকে। তাই এগুলো মোকাবিলা করতে বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরগুলোর কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে পাখিদের দূরে রাখতে আধুনিক ও প্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের কিছু সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলো কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এভিয়েশন ওয়েবসাইটগুলোর তথ্যানুসারে, পাখির আঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক উড়োজাহাজগুলোর পেছনে প্রতি বছর এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে পাখির আঘাত একটি গুরুতর বিষয়। বার্ডহিট হওয়ার অন্যতম কারণ আমাদের বিমানবন্দরের আশপাশে জলাশয় বেশি। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের নজরদারি থাকার দরকার হয়, তা হচ্ছে না। বার্ডহিটার ও বন্দুকের স্বল্পতা আছে। সেকেলে আমলের বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে পাখিদের তাড়ানোর পদ্ধতি এখন আর কাজ করবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে সাউন্ডসনিক ও আধুনিকভাবে পাখিমুক্ত রাখার ব্যবস্থাপনা নাই। ফলে বিমানবন্দরে পাখির আধিপত্য বেশি। পাখি নিয়ন্ত্রণের জন্য বেবিচকের যে পদক্ষেপ থাকা দরকার, তাও নেই। কোনো দুঘর্টনা ঘটলে বেবিচক উদ্যোগী হয়। কিন্তু পরে তা স্থিমিত হয়ে পড়ে। তাই উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের সমস্যাটি সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব বিমানবন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা উচিত।’

বিমানবন্দর, পাইলট ও বিমান সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়া দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোতে পাখি তাড়ানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বার্ডহিট আতঙ্কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলো শাহজালাল, শাহ আমানত এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তারপরে রয়েছেÑ কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর। এসব বিমানবন্দরের আশপাশের জলাশয় ও গাছপালাতে রয়েছে পাখিদের অবাধ বিচরণ।

তবে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বিমানবন্দরগুলোতে পাখি তাড়ানোর জন্য যেসব পদ্ধতি রয়েছে, তাতে কাজ হচ্ছে না। দিন দিন বাড়ছে পাখির আনাগোনা। গত ১০ মাসে পাখির সঙ্গে উড়োজাহাজের কমপক্ষে ৩২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি না হলেও উড়োজাহাজের ক্ষতি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বার্ডহিটের ফ্রিকোয়েন্সি আগের চাইতে বেড়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ করে ঢাকা এবং সিলেট বিমানবন্দরে পাখির বিচরণ বেশি। প্রায়ই আমাদের আধুনিক ও মূল্যবান উড়োজাহাজগুলো পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আমরা বছরে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছি।’

তিনি বলেন, ‘বন্দুক দিয়ে বার্ডশুট সেকেল ও সনাতনী পদ্ধতি। সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এখন আলট্রাসনিক বা ভাইব্রেশনের মাধ্যমে রানওয়ে ও বিমানবন্দর এলাকার পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের বিমানবন্দরে বার্ডহিট মোকাবিলায় আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। আর একটা বার্ডহিট হলে শুধু উড়োজাহাজই নয়, পুরো যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক সময় শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সুনামও নষ্ট হচ্ছে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ বড় প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। কিন্তু বার্ডহিট প্রতিরোধে বেবিচকের কোনো প্রকল্পও নেই। নেই কোনো গবেষণা ও পাখি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উদ্যোগ।’

বিমানসংস্থাগুলো বলছে, উড়ন্ত পাখি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের ভেতরে ঢুকে যায়, তখন ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এতে উড়োজাহাজের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাইলট যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারেন, তাহলে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হযরত শাহজালাল, শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব কয়টি বিমানবন্দরে উড়ন্ত পাখিদের আনাগোনা রয়েছে। বিমানবন্দরগুলোর পাশেই রয়েছে প্রচুর ঝোপ-জঙ্গল, গাছপালা ও জলাশয়। এগুলোতে পাখিদের প্রচুর খাবার রয়েছে। পোকামাকড়সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পাখিরা সার্বক্ষণিক ভিড় করে। তবে বিকালে ও সকালে পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। শীতকালে এসব পাখির ভিড় ও উড়ন্ত পাখির যাতায়াত আরও বেশি থাকে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বার্ডহিটের ঘটনা বাড়ছে- এর কারণ হতে পারে বিষয়টি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল হচ্ছে না এবং বার্ডশুটাররা ঠিকভাবে কাজ করছেন না। আর আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। এটা কন্ট্রোলিং করার দায়িত্ব রেগুলেটরি অথোরিটির। এ থেকে রক্ষা পেতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এজন্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। যা দরকার তা করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ কারণে এয়ারলাইন্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে; তা তো গ্রহণযোগ্য নয়।’

জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘পাখি তাড়ানোর জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া আছে। বার্ডশুটার আছে, পাখিকে ভয় দেখাতে ও চিহ্নিত করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রও লাগানো আছে। যদিও মাঝে দেখা যায় কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, যারা এগুলো দিয়েছে তারা তা নিয়ে কাজ করছে। এখনও এগুলো থেকে পুরোপুরি আশাপ্রদ সফলতা পায়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা আছে পাখি নিয়ন্ত্রণে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা