আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩ ২০:১২ পিএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩৮ পিএম
বেসরকারি সংস্থা ‘এলকপ’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার : নির্বাচনের পূর্ববর্তী সহিংসতার দৃষ্টিকোণে’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা। প্রবা ফটো
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহিংসতা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই একমাত্র সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশকে অন্য দেশগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বেসরকারি সংস্থা ’এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু ল’ অব দ্য কমন পিপল’ (এলকপ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার : নির্বাচনের পূর্ববর্তী সহিংসতার দৃষ্টিকোণে’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত দিয়েছেন। রাজধানীর একটি হোটেলে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।
এলকপের চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের পর একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এতে নির্বাচনের আগের সহিংসতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং এর কারণগুলো তুলে ধরা হয়।
এতে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০০১ সাল থেকে আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত প্রাক-নির্বাচন সহিংসতার সংখ্যা দেখানো হয়েছে। উপস্থাপনাটি ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন করার জন্য সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত সহিংসতার কথাও তুলে ধরেছে, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি। সহিংসতার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এবারের নির্বাচনপূর্ববর্তী সহিংসতা আর কত দূর যেতে পারে এই প্রশ্ন তুলে ধরার মাধ্যমে উপস্থাপনাটি শেষ হয়।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মার্ক জ্যাকসন, দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ডাচ অর্থনীতিবিদ ড. উইলিয়াম ভ্যান ডার জিস্ট মনোনীত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচকরা বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর জোর দেন। তারা নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশের সব মানুষের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং নির্বাচনের আগে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব মহলকে অনুরোধ জানান।
উইলিয়াম ভ্যান ডার জিস্ট বলেন, ’নির্বাচনে বিজয় মানে সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নয়, বরং দলগুলোকে একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে হবে।’
মার্ক জ্যাকসন বলেন, ’নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সহিংসতা আমাদের জীবনে একটি নিত্যদিনের ঘটনা, কিন্তু নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
পাওলো কাসাকা বলেন, ’অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহিংসতা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার একমাত্র সমাধান নয়। বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় নয় এবং এই সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে। এই সহিংসতা কেবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং জনগণের অধিকারকে খর্ব করবে।’
মিজানুর রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ’বাংলাদেশ কোনোভাবেই তার জাতীয় বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ এবং এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার কাজ চালিয়ে যাবে।’
মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও ও আইএনজিও কর্মকর্তা সাংবাদিক, আইনের শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন। সেমিনারে বক্তব্য দেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং, ড. উলফাত হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ম হামিদ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভেন থেরো সুনন্দপ্রিয় প্রমুখ।
পরিশেষে, এলকপের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জাতি, গোষ্ঠী, ধর্মনির্বিশেষে সব মানুষের বসবাসের জন্য দেশকে একটি উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে এবং নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেমিনারে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।