× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনার

‘গায়েবি মামলা মানবতাবিরোধী অপরাধ’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:০৪ পিএম

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫৩ পিএম

‘গায়েবি মামলা মানবতাবিরোধী অপরাধ’

গায়েবি মামলা দেওয়া শুধু একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। নির্বাচনের আগে পরিকল্পিতভাবে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নামে এ মামলা দেওয়া হয়। এসব মামলা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

রবিবার (৬ আগস্ট) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘গায়েবী মামলা ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক ওয়েবিনার বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক মনির হায়দার এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। 

ওয়েবিনারে অংশ নেন সাবেক বিচারপতি এম. এ. মতিন, অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আইন কর্মকর্তা ড. রিদওয়ানুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিডিনিউজের সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা অন্তু ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ড. জাহেদুর রহমান। 

বক্তরা বলেন, মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই। বিচার বিভাগ এ ভয়ানক নিপীড়নের বিষয়টি এড়িয়ে চলছে।

সাবেক বিচারপতি এম. এ. মতিন বলেন, ‘আমরা তো একটি শাসনতন্ত্রের মধ্যে আছি, আমরাতো জঙ্গলে নেই। এই শাসনতন্ত্রে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো কাগজে লেখা থাকলেও বাস্তবে কিছু থাকল না। এই দেশে তাহলে আমাদের সন্তানরা কীভাবে থাকবে? যেখানে সাধারণ মানুষের কোনো রক্ষাকবচ থাকল না।’ 

তিনি জানান, সভা করার অধিকারের কথা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এখানে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে কেন? এগুলো নিয়ে সেভাবে আলোচনা হচ্ছে না।

অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আইন কর্মকর্তা ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরকে মামলা দেওয়া হতো। এখন পুলিশ হোমওয়ার্ক করে গায়েবি মামলা দেয়। যারা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশগুলো আয়োজন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হচ্ছে, যাতে সামনে তারা এ কাজ না করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘এ মামলার ফলে বহু পরিবারের ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ধ্বংস হচ্ছে। তাই গায়েবি মামলা দেওয়া একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘গায়েবি মামলার শুরু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। নাশকতার গল্প সাজিয়ে এসব মামলা দেওয়া হয়। পুলিশ ও তাদের সোর্সরা সাধারণত মামলার বাদী থাকে। বর্তমানে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদেরও বাদী বানানো হচ্ছে। প্রত্যেকটি মামলায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যাতে এটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় পড়ে। কল্পিত এ মামলার আসামি থাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। সাধারণত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪ ও ৫ নম্বর ধারায় মামলা করা হয়, যাতে আসামিদের জামিন না হয় এবং সাজা দ্রুত হয় ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ মামলা হয় নির্বাচনের আগে কিংবা বিরোধী দল বড় বড় কর্মসূচি দিলে। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে যখন বিরোধীদল কর্মসূচি দিচ্ছিল তখন অনেকগুলো গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এই মামলাগুলোতে দুটো কারণে অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা শঙ্কায় থাকে যে, আমার নাম না থাকলেও এতে আমাকে যুক্ত করা যাবে। আবার পুলিশ যদি কাউকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে যদি কোন মামলা নাও থাকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হিসেবে কোন একটা মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেতাদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখতে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই মামলা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে প্রধান অন্তরায়।’ 

তিনি জানান, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে প্রথম ২০ দিনে ৩৭৩৬টি মামলা দায়ের করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে আসামি করা হয় ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনকে। আসামিদের মধ্যে মৃত, বিদেশে থাকা এবং গ্রেপ্তার হওয়া লোকও ছিল। এই মামলায় আদালত মন্তব্য করে, এই ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী রিটটি আমলে নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশের আইজিপিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এসব গায়েরি মামলায় কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানাতে রুল জারি করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অপর বিচারপতি রিটটি আইনবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে তা খারিজ করেন।’

সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা অন্তু বলেন, ‘বিএনপির অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি নেই। সাধারণত যাদেরকে মামলা দিচ্ছে তারা বিএনপির ১৯৯০ সালের ও ২০০৫ সালের কমিটির সবার নাম ধরে মামলা দিচ্ছে। এ কারণে মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও অসুস্থ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মামলায় নাম চলে আসছে। হাইকোর্টে এমন অনেক ব্যক্তি নাশকতার মামলার জামিন নিতে আসছেন, তাদের অনেকেই বৃদ্ধ, যাদের ইটপাটকেল মারার মতো শারীরিক শক্তিও নেই।’

তিনি জানান, গায়েরি মামলা মূলত দুইভাবে দেওয়া হয়েছে। একটি হয়েছে ঘটনা একেবারেই ঘটেনি, যার কল্পিত মামলা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে মামলা দেওয়া।

শিক্ষক ড. জাহেদুর রহমান বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে মোট দেড় হাজার গায়েবি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে মাত্র ২৫টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় গায়েবি মামা দেওয়া হয় শুধু মানুষকে হয়রানি করার জন্য, বিচার করার জন্য নয়। নিম্ন আদালতে এসব মামলার কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই হয় না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে যিনি ভুক্তভোগী তিনি অথবা তার আত্মীয়-স্বজন মামলা করবেন কিন্তু সাংবাদিক মাহফুজে আনামের নামে ৭০টি মামলা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাই পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ, বিচার বিভাগ নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা