প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ২১:৪৭ পিএম
খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার শুরু থেকেই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী উদ্যোগ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। যার ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের রোল মডেল।
বুধবার (২৬ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দুই দিনব্যাপী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, নেপালের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সানজেভ কুমার কর্ণ, কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব মহসিন আলী।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সম্মেলন পথ দেখাবে। তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন ও খাদ্যের স্বল্পতা সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিতকরণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চলমান বৈশ্বিক সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ও অতিবৃষ্টি খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা এসব বিষয়ের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ সরকার কৃষিতে সার, বীজ ও সেচে ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। খাদ্য, শাক-সবজি ও মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেছে।
এম এ মান্নান বলেন, গত ৪০-৫০ বছর আগে আমাদের খাদ্যে টানাটানি গেছে। এমনকি গত কয়েক শতাব্দিও সে অবস্থা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায়। বর্তমানে ১৮-২০ লাখ টন খাদ্য সংরক্ষণে আছে। আপাতত খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে না। তবে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই হতে হবে। ন্যায্যতা আনতে হবে। শ্রমজীবীদের ন্যায্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমিহীনদের মাঝে এসব জমি বণ্টন করতে হবে, সরকারও তা করে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় বজায় রেখে বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে চলতে হবে। তারপরও রাস্তাঘাটে কিছু কার্যক্রমের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা প্রচুর খাদ্য পাচ্ছি কিন্তু ভূমিহীন ও শ্রমিকরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে খাদ্য পাচ্ছে না। এটি নিশ্চিত করতে হবে।
আখতারুজ্জামান বলেন, খাদ্য পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে সফল রাষ্ট্র। কেননা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন।
নেপালে খাদ্যনিরাপত্তা পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সানজেভ কুমার কর্ণ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাস্তসংস্থানের কারণে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
মহসিন আলী বলেন, ক্ষুধার কারণে বিশ্বে প্রতি ৪ সেকেন্ডে একজন করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশকিছু দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্রের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাও বাড়ছে। যা সার্বিকভাবে এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি করছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলন থেকে ৫ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধনের মহসিন আলী।
প্রস্তাবগুলো হল-
১. ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সুরক্ষার জন্য জলবায়ু সহনশীল, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা এবং পারিবারিক কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অধিকারকে সমুন্নত রাখা;
২. বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহে খাদ্য অধিকার আইন নিশ্চিত করা;
৩. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ পর্যালোচনা করে সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক অংশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা;
৪. কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই করার জন্য করপোরেট নিয়ন্ত্রিত কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তে জনবান্ধব কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা;
৫. কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থায় বহুবিধ অংশিদারত্ব গড়ে তোলা সেখানে নাগরিক সমাজের সংগঠন, কৃষক সংগঠন, গবেষক, যুব, নারী, মৎস্যজীবী, ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষকসহ সকলের কণ্ঠস্বর জোরালো করা।
সম্মেলনের প্রথম দিনে ছয় শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তাছাড়া ফিলিপাইন, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ সরাসরি এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।