× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আফ্রিকান ভ্যাকসিনে দেশে বাড়তে পারে খুরা রোগ

ফারুক আহমাদ আরিফ ও সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৪:৫৮ পিএম

আফ্রিকান ভ্যাকসিনে দেশে বাড়তে পারে খুরা রোগ

খুরা রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বিশ্বকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে জাতিসংঘের বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্পষ্ট গাইডলাইন দিয়েছে। সেই গাইডলাইন উপেক্ষা করে আফ্রিকার গবাদিপশুর জন্য তৈরি খুরা রোগের ভ্যাকসিন আমদানি ও বাজারজাত করা হচ্ছে বাংলাদেশে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে হাত করে ওয়ান ফার্মা লিমিটেড এই ভ্যাকসিন আমদানি করে দেশের বাজারে ছাড়ছে। এতে আফ্রিকার দেশগুলোয় যে ধরনের রোগ দেখা দেয়, বাংলাদেশের গরুরও সে ধরনের রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়ান ফার্মার আমদানিকৃত ভ্যাকসিনটি সরকারি পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে। এর উৎপাদক কোম্পানি রাশিয়ার আরিয়াহ। বাংলাদেশে আমদানিকৃত তাদের ওরাল ভ্যাকসিনটি কোনোভাবেই ওই গাইডলাইন মেনে উৎপাদিত টিকা নয়। শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিনটি প্রথম পর্যায়ে ওরাল হিসেবে আমদানি করা হলেও পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ওরাল শব্দটি কেটে ‘ইনজেক্টেবল’ করা হয়। কাগজে পরিবর্তন ঘটলেও ভ্যাকসিনটি থেকে যায় তরল বোতলজাতকৃত ওরাল হিসেবে। আন্তর্জাতিক ওষুধ নীতিমালা মতে, মুখে খাওয়ার ওষুধ আর ইনজেকটেবল ফর্মুলা কোনোভাবেই এক নয়। 

এ অবস্থায় সম্প্রতি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে এফএমডি নামক ওই ভ্যাকসিন আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটির দাবি, বাংলাদেশের জন্য এফএমডি ভ্যাকসিন কী ধরনের ভাইরাস দ্বারা তৈরি করা হবে তা বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী এশিয়া-১ ভ্যাকসিনটি দেশে উৎপাদন ও টেন্ডারের মাধ্যমে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়ান ফার্মা লিমিটেড নামক কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশনকৃত এফএমডি ভ্যাকসিন পোল-৪ (ও.এ সেট ১.২.৩), পোল-৫ (ও.এ সেট ১.২), পোল-৬ (ও.এ সেট ১.২.৩)-এ যে ভাইরাস রয়েছে তা বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ ও জনস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর। কারণ সেট ১.২.৩ ভাইরাসসমূহ শুধু আফ্রিকা মহাদেশে মহামারি আকারে বিস্তার করলে সেখান থেকে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই জীবন্ত ভাইরাসগুলো যদি পোল-১ এবং পোল-২-এ ব্যবহার করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে আফ্রিকান ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। 

এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাজ রেজিস্ট্রেশন দেওয়া। আমরা কোম্পানিটিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছি। এখন তারা যা আমদানি করছে সেটি দেখার দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। কেননা এ বিষয়ে তাদের টেকনিক্যাল টিম রয়েছে। তিনটি বিশেষজ্ঞ টিম বিষয়টি পর্যালোচনা করে ভ্যাকসিনটি কিনেছে। সুতরাং এর ভালোমন্দের বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়েও তার কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ওয়ান ফার্মার অ্যানিমেল হেলথের হেড অব অপারেশন ডা. মোমেন সিদ্দিকী বলেন, এটি ডব্লিউএইচও কর্তৃক অনুমোদিত। বিগত ৭ বছর যাবৎ আমরা বাজারজাত করছি। সরকারিভাবে খুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কোথাও থেকে কোনো ধরনের নেতিবাচক কথা আসেনি। তা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গরুর খুরা রোগের জন্য একই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার হয়ে থাকে। আর আবহাওয়ার কারণে ভাইরাসের কোনো ভেদাভেদ হয় না। সকল দেশেই একই ধরনের কাজ করে থাকে। তাই আমাদের দেশেও কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পশুর যত ওষুধ আমদানি করা হয়, তার মধ্যে ওয়ান ফার্মা সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত। 

এদিকে ওয়ান ফার্মার আমদানিকৃত গরুর খুরা রোগের ভ্যাকসিনটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের জন্য তৈরিকৃত নয় দাবি করে গত ১৪ মে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর উপদেষ্টা ড. ‍সুফি সাগর সামস ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে দেশের প্রাণিসম্পদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভ্যাকসিন আমদানি অতি দ্রুত নিষিদ্ধের পাশাপাশি ওয়ান ফার্মা নামক কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন বাতিলেরও আবেদন জানানো হয়। 

জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর খুরা ও মুখের অসুখের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি এবং এর প্রযোজ্য ক্ষেত্র হিসেবে পুরো পৃথিবীকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মরিশাস, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। এ ছাড়া উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা ও পশ্চিম/মধ্য আফ্রিকা শিরোনামে পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে আলাদা করা হয়েছে। ড. ‍সুফি সাগর সামস বলেন, ডব্লিউএইচও খুরা রোগের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে গাইডলাইন দিয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় তেমন ওষুধ কেন আমদানি ও বাজারজাত করছে ওয়ান ফার্মা লিমিটেড সে ব্যাপারে আমরা ঔষধ প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি। 

বাগেরহাটের ফকিরেরহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, খুরা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে দেশে ইনজেক্টেবল ওষুধ ব্যবহার হয়। সরকারিভাবে এটি বিনামূল্যে বা সামান্য দামে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ডব্লিউএইচও ঘোষিত ৭টি স্টেন। এগুলোর যেকোনো একটি আমাদের দেশে থাকতে পারে। দেশে ৪টি স্টেন খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে ইনজেক্টেবল। এটি চামড়ার নিচে ইনজেক্ট করা হয়। তাতে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওরাল দ্রুত কাজ করে না। ওরাল ভ্যাকসিন-এফএমডি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওরাল ভ্যাকসিন-এফএমডি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনাÑ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদার কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা