প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩ ২০:৩৭ পিএম
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩ ২১:০০ পিএম
বিজয়ী বিতার্কিকদের সঙ্গে অতিথিরা। প্রবা ফটো
স্বাস্থ্য খাতের প্রধান সমস্যা কেনাকাটায় দুর্নীতি বলে মনে করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের প্রধানতম সমস্যা অব্যবস্থাপনা ও কেনাকেটায় দুর্নীতি। এই দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে যে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এই ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে সম্ভব নয়। এই ব্যবস্থাপনাতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জরুরি।‘
বুধবার (১২ জুলাই ) ঢাকার এফডিসিতে ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাই স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনার প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ’সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। নবজাতক ও তার মা আঁখির মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। তবে খুনিরা যদি জামিন পেতে পারে, তাহলে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় যে দুজন চিকিৎসক হাজতে রয়েছেন তাদেরও জামিন পাওয়া উচিত। কারাগারে আটক রেখে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। হাসপাতালে চিকিৎসকদের যখন তখন কর্মবিরতি গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অনেক সময় এমন প্রেক্ষাপট ঘটে যার জন্য চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হন।’
তিনি আরও বলেন, ’বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত হলেও এখন পর্যন্ত অনিয়ম নিযন্ত্রণে কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু সাময়িক অভিযান পরিচালনা করলে চলবে না। ডেঙ্গু মোকাবিলায় পার্শ্ববর্তী দেশের মতো বছরব্যাপী অভিযান চালাতে হবে।’
ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, ’দেশের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্য খাত। বছরের পর বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের প্রধান মাফিয়ারা। কোন হাসপাতালে কোন যন্ত্রপাতি লাগবে, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার মনমতো যন্ত্রপাতির তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে ক্রয় অনুমোদন করে নেওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বহুবার। কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায়, রক্তসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে কমিশন বাণিজ্য, হার্টের চিকিৎসায় রিং বাণিজ্য, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা, কমিশনের জন্য মানহীন ওষুধ প্রেসক্রাইব করা, লাইফ সাপোর্টের নামে মিথ্যাচারসহ নানা অনিয়ম চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।
’প্রকৃতপক্ষে দেশে এখনও পেশাদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা, রাজনীতিকরণ, টেন্ডার বাণিজ্য, বাণিজ্যিকীকরণ এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, যেখানে চিকিৎসাকেন্দ্রের ওপর মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা ক্রমশ কমে আসছে। যা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী, সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, স্টাফ ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগকারী কারও জন্য কল্যাণকর নয়।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় কিরণ বলেন, ’আশ্চর্যের বিষয় ডাক্তার সংযুক্তা সাহার অধীনে আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করলেও ওই চিকিৎসক দেশেই ছিলেন না। কীভাবে তা ঘটল, কারা ঘটালো? এটি কি মৃত্যু না হত্যা ? এই প্রশ্ন এখন সর্বমহলে।’ আর কত আঁখি মারা গেলে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ করেন।
প্রতিযোগিতায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা, সাংবাদিক বোরহানুল আশেকীন, সাংবাদিক হিমেল মাহবুব এবং উন্নয়ন গবেষক জাহিদ রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।