× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৯ মাস গ্যাস বিল দেয় না পিডিবি

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৭ পিএম

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩ ২০:৪৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বিল দিতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত অক্টোবরের পর থেকে আর কোনো বিল দেয়নি পিডিবি। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিল আদায়ে দেনদরবার শুরু করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে গ্যাস বিল আদায় করার জন্য জ্বালানি বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উভয় বিভাগে খবর নিয়ে জানা গেছে, এর আগে এমন সমন্বয়হীনতা দেখা যায়নি। জ্বালানি বিভাগ সম্প্রতি তাদের সমন্বয় সভায় আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিল দিতে না পারলে তাদের লাইন কেটে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ এবং সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

পিডিবির কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মোহাম্মদ জাকীর হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিল না দিলে জ্বালানি বিভাগ থেকে লাইন কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকীর হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি এখানে নতুন। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তিনি অপারেশন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নায়েব আলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। টেলিফোনে নায়েব আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর। পিডিবির বিদ্যুৎ বিলের একটি অংশ ভর্তুকি হিসেবে দেয় অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ যথাসময়ে ভর্তুকির অর্থ না দেওয়াতে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, গত অক্টোবর থেকে আমাদের বিল পরিশোধ করে না পিডিবি। এতে আমরা অনেক সংকটে রয়েছি। আমরা পেট্রোবাংলাকে বিল পরিশোধ করতে পারছি না। তবে এই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা করেন।

প্রতিদিন কী পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন

প্রতিদিন গড়ে ১৮ কোটি থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকার গ্যাস প্রয়োজন হয়। আর মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার। সেই হিসাবে প্রায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। দেশে মোট উৎপাদনের ৫০ ভাগের কাছাকাছি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে। প্রতিদিন প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট/আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুৎ গ্যাস থেকে উৎপাদন করা হয়। তবে সরবরাহ বেশি থাকলে গ্যাস দিয়েই এর চেয়ে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সবগুলো বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক ৯০০ থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে।

কেন এই সংকট

সূত্র বলছে, এখন দেশে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে প্রতি ইউনিটে সরকার পিডিবিকে উৎপাদন পর্যায়ে ৩ টাকা ২৩ পয়সা ভর্তুকি দেয়। অর্থাৎ পিডিবি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ দেখায় ৮ টাকা ২৭ পয়সা। সরকারের তরফ থেকে এই ভর্তুকির অর্থ গত বছর থেকে ঠিকঠাক ছাড় করাতে না পারায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। পিডিবি সূত্র বলছে, এখন সব মিলিয়ে পিডিবির দেনার পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সরকার দুই দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও এখনও প্রকৃত উৎপাদন খরচ থেকে তা অনেক কম।

সংকটে পেট্রোবাংলা

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এখন অর্থ সংকটে তারা বিদেশি কোম্পানির গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এখন সব মিলিয়ে পেট্রোবাংলার বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি (আইওসি) ছাড়াও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে পেট্রোবাংলা। এর পুরোটাই তাদের ডলারে পরিশোধ করতে হয়। আইওসির গ্যাসের মূল্য পরিশোধ না করলে বিলের ওপর সুদ দিতে হয়। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রেও একই বিধান রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দেশীয় গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। দেশে মোট ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াটের ৫৭টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

তিতাসের বকেয়া ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা

তিতাস গ্যাস সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা পাবে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ১ হাজার ৫৮ কোটি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে আমাদের বকেয়া রয়েছে। আমরা তো চাইলেই পিডিবির লাইন কেটে দিতে পারি না। তাহলে দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে। 

অর্থ বিভাগ ভর্তুকি ছাড় না করায় যত সংকট

পিডিবি সূত্র বলছে, দেশে যেসব সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাদের বিল দিতে পারছে না পিডিবি। একটি সূত্র বলছে, গত ২৫ জুন পিডিবিকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। পিডিবি আগামী ছয় মাস বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কী পরিমাণ ভর্তুকি প্রয়োজন হবে, তার একটি হিসাব দিয়েছে সরকারকে। এতে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৮২২ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। কিন্তু পিডিবিকে মাসে ২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে, যা দিয়ে দেনার অর্ধেক পরিশোধ করা সম্ভব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তাদের বকেয়া চাইতে পিডিবির কাছে গেলে পিডিবি চেয়ারম্যান সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব বিবরণী তাদের সামনে দিয়ে বলেন, কোনো অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। এখন সরকার ভর্তুকির অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত তার কিছু করার নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা