× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নীতিমালায় ‘গলদ, বিপুল জমি অনাবাদি হওয়ার শঙ্কা

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১১:৪২ এএম

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১১:৫১ এএম

নীতিমালায় ‘গলদ, বিপুল জমি অনাবাদি হওয়ার শঙ্কা

সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নীতিমালায় অনাবাদি (পতিত) জমি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা এই নীতিমালায় গলদ রয়েছে বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, নীতিমালার কোথাও কৃষিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং কৃষিকে বাইরে রেখে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পতিত জমির সংস্থান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দেশে সত্যিকার অর্থে পতিত জমি পাওয়া কষ্টকর। সব জমিতেই কোনো-না-কোনো ফসল উৎপাদন হয়। আর এই জমি যদি সারা বছর অনাবাদি থাকে, তাহলে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন যে পরিকল্পনা তাতে বলা হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই গোটা বিদ্যুৎ যদি সৌরশক্তি দিয়ে উৎপাদন করতে হয়, তাহলে এক কোটি একর জমির প্রয়োজন হবে। 

বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালনির সম্প্রসারণ ঘটছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির মতো এর উৎস নির্দিষ্ট কোনো দেশের হাতে সংরক্ষিত নয়; সূর্য ও বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সংস্থান করা সম্ভব। এজন্য জ্বালানি বাবদ ব্যয় শূন্য। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ জমি প্রয়োজন। 

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এক গবেষণায় সম্প্রতি দেখিয়েছে, বিপুল পরিমাণ জমিকে অনাবাদি রাখার বদলে চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে এখনও সেভাবে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। যেসব সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর নিচের জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। কেন্দ্রগুলো নির্মাণের সময়ও ফসল উৎপাদনের কোনো পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়নি। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নীতিমালায় অনাবাদি জমি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রেখে উদ্যোক্তাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ইঞ্চি জমিকে কৃষি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী বছরগুলোর বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পাওয়ার সেল গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন আড়াই একর জমি প্রয়োজন হয়। এতে আরও বলা হয়, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রর নিচে ধান পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া ছায়াযুক্ত স্থানে পান এবং সবজিও চাষ করা যায়। কেন্দ্রের ৬০ ভাগে প্যানেল এবং ৪০ ভাগ খোলা জায়গা থাকে। এই ৬০ ভাগের নিচে সবজি ও মশলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করা যায়।

গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, টমোটো, গাজর, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, আলুসহ সব ধরনের সবজি এখানে চাষ করা যায়। ফলের মধ্যে কলা, তরমুজ, বাঙ্গিসহ দেশি সব ফলের চাষ সম্ভব। এ ছাড়া হলুদ, মরিচ এখানে চাষ করা যায়। একই সঙ্গে বলা হচ্ছে, উন্মুক্ত জলাশয়ের ওপর সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে সেখানে মাছ চাষ করা যায়। স্থলভাগে নির্মাণ করলে গবাদি পশু, মুরগি এবং হাঁস চাষ করা যায়। 

জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে দেখিয়েছি কীভাবে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রর নিচের জমিকে কাজে লাগানো যায়। এখন সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, কেউ সৌরবিদ্যুতের অনুমোদন চাইলে অবশ্যই তাকে একই সঙ্গে কৃষির প্রকল্প জমা দিতে হবে। সরকার বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি রাখতে চায় না।

সূত্র জানায়, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) সিরাজগঞ্জে তাদের ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। প্রায় ২৩ একর জমির ওপর নির্মিত ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিচে সবজি আবাদ করে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ইকোলোজিক্যাল জোন লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ইকোলোজিক্যাল জোন লিমিটেড ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রর জমির নিচে তারা কুমড়া লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন। সারা দেশে সৌরবিদ্যুতের নিচে ফসল আবাদ দারুণ সাড়া ফেলেছে। প্রথমবার পরীক্ষামূলক হওয়াতে এই ফসল তারা বিক্রি না করে আশপাশের মানুষদের খাওয়ার জন্য দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৬ একর জমিতে কুমড়া লাগিয়েছিলাম। কয়েক হাজার কুমড়া তোলা হয়েছিল। স্বাদের দিক থেকে এই কুমড়ার সঙ্গে সাধারণ কুমড়ার কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত সরকার যেসব পরিকল্পনা করছে তার মধ্যে কোথাও কৃষিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং কৃষিকে বাইরে রেখে সৌরবিদ্যুতের জন্য পতিত জমির সংস্থান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে পতিত জমি পাওয়া কষ্টকর। সব জমিতেই কোনো-না-কোনো ফসল উৎপাদন হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গলদ রয়েছে। আমরা যদি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে কৃষি আবাদকে বাধ্যতামূলক করে দিতে পারি তাহলে একই জমির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সেটি না করায় উদ্যোক্তারা কৃষিজমিকে পতিত দেখিয়ে প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আবার সরাসারি কৃষিজমি দিলে উদ্যোক্তারা ধানের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা এবং সরকার সবাইকে জমি ব্যবহারের দিক থেকে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা