× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানবাধিকার পরিষদে সদস্য পদে লড়তে জোর প্রচারে বাংলাদেশ

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:১৮ পিএম

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৫৭ পিএম

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। ছবি : সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, এ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ মানবাধিকার সুরক্ষা ও অঙ্গীকারের বিষয়টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুলে ধরছে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের কাছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোর মাধ্যমেও নির্বাচনী প্রচার চালানো হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ, ইইউসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্প্রতিক বছরগুলোর মূল্যায়ন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো। আগামী ১১ অক্টোবর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে এশীয়-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া অন্য দেশগুলো হচ্ছেদক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, বাহরাইন, কিরগিজস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। এই সাত দেশের মধ্য থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ভোটে মানবাধিকার পরিষদে চারটি দেশ সদস্য নির্বাচিত হবে।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালেই বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর (ইউপিআর) ১৭৮টি অঙ্গীকারে সম্মতি দিয়েছে। ইউপিআর হলো জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার মানদণ্ড নির্ধারণ এবং তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ইউপিআরে স্বাক্ষর করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি-সংক্রান্ত রেকর্ড জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ চাইতে পারে, সংগ্রহ করতে পারে, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারে। ইউপিআরে স্বাক্ষর করা রাষ্ট্র জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ততা অর্জন করে। বাংলাদেশ সেই উপযুক্ততা ২০১৮ সালেই অর্জন করে। চলতি বছর ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য ১৪টি সদস্য পদে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ ২০২২ সালের শুরুতেই ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে অন্যান্য এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে অন্য ছয়টি দেশও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশ এ নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রচারণা শুরু করে।

সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সামনে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করেছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারণার কৌশল হিসেবে মানবাধিকার লঙ্নঘ বিষয়ে অপপ্রচার। এই অপপ্রচারের কারণে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক তথ্য এসেছে, যেগুলো অনেকাংশেই সত্য নয়। কিছু তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন। কিন্তু ভিত্তিহীন তথ্যের জোরালো নেতিবাচক প্রচারণার কারণে ইউরোপ এবং এশীয় অঞ্চলের মানবাধিকার সংবেদনশীল দেশগুলোর ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। 

এ বিবেচনা সামনে রেখে চলতি বছরের শুরু থেকে পাঁচটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে বাংলাদেশে মানবাধিকরের সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিফলনের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব রেকর্ড থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে সব সদস্য রাষ্ট্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেসব বিষয়ে সঠিক ও যথাযথ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্যও তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। জাতিসংঘ, ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার বিষয়ে সময়ে সময়ে যেসব তথ্য চাচ্ছে, তা-ও নিয়ম মেনে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, কিরগিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ এমনিতেই এগিয়ে আছে। কারণ ওই দুটি দেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দৃষিট্ভঙ্গির বিবেচনায় পশ্চিমাদের সুনজরে নেই। বাকি চারটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, বাহরাইন ও মালদ্বীপের সঙ্গেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বাংলাদেশের। এ চার দেশই মানবাধিকার পরিস্থিতির সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও বাহরাইন অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে। ফলে ওই দুই দেশের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। 

জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নে ভিয়েতনামে মানবাধিকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো বলা হলেও ওই দেশে আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর কঠোরতা আরোপ, মত প্রকাশের ক্ষেত্র সংকুচিত করতে সরকারের নানা নির্দেশনার কারণে মানবাধিকার সংবেদনশীল দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি না-ও হতে পারে। এ কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ মোটামুটি সমান্তরাল রেখাতেই আছে। আর মালদ্বীপও মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নেই। ফলে এবারের জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ নির্বাচনে এশীয়-প্রশান্তমহামাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে চারটি সদস্য রাষ্ট্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও মালদ্বীপের মধ্যেই জোরালো লড়াই হবে। 

পশ্চিমা একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ইউপিআরের শর্ত পূরণে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘ এবং ইইউর সুপারিশগুলোর একটি এখন পর্যন্ত আমলে নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। এক প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার বিষয়ে বারবার জাতিসংঘ, ইইউর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুপারিশ দিলেও বাংলাদেশ তা একেবারেই গ্রহণ করেনি। 

বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের বিষয়ে বাংলাদেশকে বারবার স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হলেও বাংলাদেশ তা আমলে নেয়নি। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি ধারা সংশোধনের অনুরোধ করা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। বরং নির্বাহী বিভাগকে সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারি করার অবাধ ক্ষমতা দিয়ে ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট করার সরকারি প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়টি জাতিসংঘ এবং ইইউ গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে। 

এ সূত্র আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন ধরনের আলামত দেখা যাচ্ছে। আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের নাম আসত। এখন সরকারি প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও গুরুতর ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অভিযোগ আসছে। এক্ষেত্রেও সরকার অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। 

বিশেষ করে কুড়িগ্রামে কয়েক বছর আগে একজন সাংবাদিককে খবর প্রকাশের অপরাধে সারা রাত ধরে যে সরকারি কর্মকর্তারা নির্যাতন চালিয়েছিলেন, সরকার তাদের পুরোপুরি দায়মুক্তি দিয়েছে। দায়মুক্তি পাওয়ার পরও ওই কর্মকর্তারা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন এবং সেই পদের অপব্যবহার করে আবারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছেন, তার সপক্ষেও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রামের ঘটনায় দায়মুক্তি পাওয়া একজন কর্মকর্তা সাতক্ষীরায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর আবারও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছন; তার সপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানিয়ে এই সূত্র জানায়, বাংলাদেশে নির্বাহী কর্মকর্তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জাতিসংঘ এবং ইইউ গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে। 

পশ্চিমা অপর একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন জাতিসংঘসহ একাধিক পশ্চিমা দেশকে দিয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদনগুলো মূলত সরকারি বিভিন্ন উৎস থেকে দেওয়া হয়েছে। অন্য যেসব উৎস থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর সঙ্গে সরকারি তথ্যের বড় গরমিল রয়েছে। বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে সরকারি তথ্য সন্তুষ্ট হওয়ার মতো নয়। 

তবে এই সূত্রের মতে, মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশের জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ পরিষদের  সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের যথেষ্ট ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতাও সবার নজরে এসেছে।

প্রবা/এইচকে /এমআই

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা