প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩ ১২:৫১ পিএম
ফাইল ফটো
শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করছে জাতিসংঘ। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী চেয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন সংস্থাটির শান্তিরক্ষা মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাক্রোয়া ও ক্যাথরিন পোলার্ড।
গতকাল রবিবার জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা প্রস্তুতিমূলক সভা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে নারী শান্তিরক্ষী বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোয়া ও ক্যাথরিন পোলার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গণভবনে এ সাক্ষাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, জাতিসংঘ সফলভাবে তার শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারী নিরাপত্তা ও (জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে) নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। এ বৈঠকের আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের নারী শান্তিরক্ষী বাড়ানোর লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে পিয়ের ল্যাক্রোয়াকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, শান্তিরক্ষা মিশনে আরও সক্রিয় ভূমিকা ও পদক্ষেপ রাখতে বাংলাদেশ থেকে নারী শান্তিরক্ষী পাঠানো বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের ইউনিফর্মড জেন্ডার প্যারিটি কৌশল অনুযায়ী বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।
ড. মোমেন নারী শান্তিরক্ষীদের ব্যক্তিগত আত্মত্যাগের স্বীকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে বক্তারা বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে বৈষম্য ও যৌন হয়রানির কোনো জায়গা নেই। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একসঙ্গে সবাইকে কাজ করতে হবে। বৈঠকে জাতিসংঘ মিশনের নারী সদস্যরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন তা কমিয়ে আনতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়।
চলতি বৈঠকের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ, কানাডা ও উরুগুয়ে। নারীর সমান সুযোগ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যৌন হয়রানি রোধ এবারের সভা থেকে সুপারিশ হিসেবে উঠে এসেছে। এই সুপারিশগুলো আগামী ডিসেম্বরে ঘানায় যেসব দেশে শান্তিরক্ষী আছে সেসব দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরা হবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘শান্তিরক্ষায় নারীদের যথাযথ অংশগ্রহণ শুধু লিঙ্গ সমতার জন্য প্রয়োজন নয়, এটি কার্যকর শান্তিরক্ষা মিশন এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বড় উপাদান।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বড় সেনা মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তি, নিরাপত্তা ও লিঙ্গ সমতার মূলনীতি প্রসারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ অবদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রণী অবস্থানের প্রশংসা করেন। তারা নারী শান্তিরক্ষী বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ও প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। তারা বৈশ্বিক শান্তির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়েছেন।