কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩ ১১:৩৮ এএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৩ ১১:৪৫ এএম
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফটো সংগৃহীত
আজ বুধবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বহুল আলোচিত নরেন্দ্র মোদি-জো বাইডেন বৈঠক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
গত ১৯ জুন টাইম ম্যাগাজিনের একটি নিবন্ধেও এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক করতে যাচ্ছেন। এ বৈঠকের সফলতার ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নীতিনির্ধারণী বিষয়ের ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, বিশ্ব বাণিজ্য এবং রাজনীতিতে চীনকে মোকাবিলা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এ বৈঠকে প্রাধান্য পাবে।
একটি পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিশ্ব বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র মিত্রের সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছে। ইউক্রেন সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ রাশিয়া এবং এ মুহূর্তের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়াকে যতটা সম্ভব একঘরে করে ফেলা। রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর সঙ্গে তাই যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নের কূটনীতি জোরদার করেছে। এ কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনেও সফর করেছেন এবং এক চীন নীতির প্রতি সমর্থনের কথাও বলে এসেছেন। একইভাবে এই মুহূর্তে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সঙ্গত কারণেই মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে। বিশেষ করে এখানকার আগামী নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে; আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এ বৈঠকে তুলে ধরবেন বলে গত কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এ বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে শুধু বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসার সম্ভাবনা কম। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু এবং এ অঞ্চলে ক্রমাগত চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ঠেকানোর বিষয়গুলো অবশ্যই আসবে। যার ধারাবাহিকতায় এই আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিবেচনায় বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলগুলোর কী অবস্থান, অতীতে কোন সরকারের ভূমিকা কী ছিল এবং ভবিষ্যতেই বা কী হতে পারে-- এসব বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভারতের কাছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক রয়েছে। যোগাযোগ, জ্বালানি ও সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য রচিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই একমাত্র শক্তি, যার মধ্যে ব্যাপক খোলামেলা ও অংশীদারত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। উপ-আঞ্চলিকতা ও বিমসটেককে ঘিরে রয়েছে দুই দেশের ব্যাপক সহযোগিতার ক্ষেত্র। এই সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি আসতে পারে।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারত বরাবরই আগ্রহী এবং প্রতিটি বড় সফরেই তারা প্রতিবেশীদের নিয়ে আলোচনা করে থাকে। তাই বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতির আলোকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের কূটনীতি নিয়ে অন্য দেশের আগ্রহ থাকতেই পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য অনেক দেশ নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আলোচনা হলেও বিষয়টিকে তারা ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাত্রার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করবেন-- এটিই আমার ধারণা। কারণ এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।