× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কমছে কলমের ভ্যাট

দুই হাজার টাকা আয়করের বিধান বাতিল হচ্ছে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১০:০৬ এএম

আপডেট : ২০ জুন ২০২৩ ১৪:৪০ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে দুই হাজার টাকা আয়করের যে বিধান রাখা হয়েছে তা বাতিল করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও আয়কর দেওয়ার বিধান রাখা হয়। অর্থাৎ প্রস্তাব অনুযায়ী, রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে শূন্য রিটার্ন জমা (করযোগ্য আয় না দেখিয়ে রিটার্ন জমা) দিলেও দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। তবে বাজেটে এমন বিধান রাখায় বিভিন্ন মহলে তুমুল বিতর্কের পর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, দুই হাজার টাকা কর নির্ধারণ নিয়ে সাধারণের মধ্যে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। জাতীয় সংসদের অনেক আইনপ্রণেতা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও এর বিপক্ষে মত দিয়েছে। সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইন বাতিল করবেন। এই আইন বাতিল হচ্ছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এমন আইন করার আগে কী ভাবনা ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ার কারণে অনেক করদাতা করজালের বাইরে চলে যাবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা হিসেবে টিআইএনধারীদের কাছ থেকে বছরে দুই হাজার টাকা কর সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি যৌক্তিক মনে হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে নেতিবাচক বক্তব্য আসার পর সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে আপাতত এই বিধান বাতিলের সুপারিশ এসেছে।

এর আগে গত ১ জুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মূলত যারা ৩৮ ধরনের (প্রস্তাবিত আয়কর আইনে আরও ৫টি সেবা যুক্ত করা হয়েছে) সরকারি সেবা নেবেন, তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও জমা দিতে হবে। প্রস্তাবটি পাস হলে যারা এসব সেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দেবেন, করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও তাদের ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

এর পরের দিন ন্যূনতম আয়করের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সেই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য, সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে না, তাদের তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।

অন্যদিকে এফবিসিসিআইসহ একাধিক সংগঠন এই বিধান বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছে। বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়াটা একটা বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত।

তোপের মুখে কমছে কলমের ভ্যাট

নতুন বাজেটে শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলপয়েন্ট কলমের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে এই সিদ্ধান্ত থেকে সম্পূর্ণ সরে না এলেও আংশিক সরে আসতে বাধ্য হয়েছে সরকার। যদিও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষার মূল উপকরণ থেকে কোনো ধরনের ভ্যাট আরোপ করা উচিত নয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলেও এখন তা কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বলপয়েন্ট কলমের ওপর কোনো ধরনের ভ্যাট আরোপ করা ছিল না।

বর্তমানে শিক্ষা উপকরণের লাগামহীন দামে বেকায়দায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তার ওপর আবারও দাম বাড়লে বেকায়দায় পড়বেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সংসারের খরচ মেটানোই দায়। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানদের শিক্ষার পেছনে টাকা ব্যয় করতে হয়। আবারও দাম বাড়লে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াই কষ্টকর হয়ে যাবে। হয়তো খাওয়ার খরচ থেকে কাটছাঁট করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার পরামর্শ তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কলমের ওপর ভ্যাট বসিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা সমীচীন হবে না। করোনা মহামারি, মুদ্রাস্ফীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার সংকট- সব মিলিয়ে মানুষের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে; তাতে দরিদ্র পরিবারের যারা লেখাপড়া করে তাদের ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাটও যদি করা হয়, সেটাও কিন্তু একটা অতিরিক্ত চাপ হবে। কারণ ভ্যাট আরোপ করার আগে কলমের দাম যা ছিল, তাতেও অনেকের পক্ষে কলম কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এখন যদি পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া হয়, সেটা তাদের ওপর আরও চাপ তৈরি করবে।

এদিকে বিলাসবহুল জিনিসের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে শিক্ষার যাবতীয় উপকরণে ভ্যাট বাতিল করা উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কলম থেকে যে বিরাট একটা রাজস্ব আসে, তা নয়। এখান থেকে কয়েকশ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে- তাও নয়। সুতরাং এখানে ভ্যাট রাখা দরকার আছে বলে মনে হয় না। রাজস্ব বাড়াতে হলে বিত্তশালী লোকজন যেসব বিলাসবহুল জিনিস ব্যবহার করে তার ওপর বাড়ানো হোক।

কোনো পণ্যের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া সরকারের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে বলে মত পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, কাগজ, কলম, বই- এসব শিক্ষা উপকরণ অনেক দেশে অব্যাহতি দেওয়া থাকে আবার অনেক দেশে থাকে না। এটা সরকারের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো ভুল থাকলে কিংবা কোনো বিষয়ে চাপ তৈরি হলে তা পরবর্তীকালে সংশোধিত বাজেটে পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রেও ঘটনা তাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা