প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ০৯:৩৬ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩ ০৯:৩৭ এএম
সুফিয়া কামাল।
এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় রক্ষণশীল পরিবেশে বড় হলেও সুফিয়া কামালের মনোগঠনে দেশ, দেশের মানুষ ও সমাজ এবং ভাষা ও সংস্কৃতি মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তিনি হয়ে ওঠেন নারী জাগরণ, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রেরণা।
কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সুফিয়া কামালের বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁর পিতা গৃহত্যাগ করেন। মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের স্নেহ-পরিচর্যায় লালিত-পালিত হন। তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ লাভ করেননি। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবেশে বাস করেও তিনি নিজ চেষ্টায় হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। বাড়িতে উর্দুভাষার চল থাকলেও নিজ উদ্যোগেই তিনি বাংলা ভাষা শিখে নেন।
১৯১৮ সালে সুফিয়া কামাল মায়ের সঙ্গে কলকাতা যান। সেখানে তাঁর সাক্ষাৎ হয় বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তাঁর শিশুমনে রোকেয়া-দর্শনের সেই স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকে; অবিরাম অনুপ্রাণিত করতে থাকে। ১৯২৩ সালে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন। ফলে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তাঁর প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ প্রকাশিত হয়।
সুফিয়া তাঁর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় গেলে কীর্তিমান বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৯ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। ১৯৩২ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। ১৯৩৩ থেকে ৪১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা করপোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাঁঝের মায়া কাব্যগ্রন্থ। এর ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমেই সুফিয়া কামালের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৮ সালে সুফিয়া কামাল ব্যাপকভাবে সমাজসেবা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সুফিয়া কামাল সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ওপর দমননীতির অঙ্গ হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে তিনি ‘সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলন’ পরিচালনা করেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন এবং আজীবন এ দায়িত্বে ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি দেশের মধ্যে থেকেই মুক্তিবাহিনীকে সাহস ও শক্তি জোগান। তাঁর ‘একাত্তরের ডায়েরী’ বিখ্যাত গ্রন্থ। স্বাধীনতার পরেও সুফিয়া কামাল অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। এদেশের প্রধানতম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আমৃত্যু সভানেত্রী ছিলেন।
সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ নামক জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন; কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কারে মধ্যে রয়েছেÑ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ভক্ত-অনুরাগীরা কবি সুফিয়া কামালকে মহীয়সী নারী হিসেবেই অভিহিত করে থাকেন।
সুফিয়া কামালের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সভাগৃহে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা দেবেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।