× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প

দরপত্র মূল্যায়নে নয়ছয়

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩ ২১:৪২ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

এস্টাবলিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ইডিএলএম) প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রের ‘আবশ্যিক প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা’ শর্তের যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে উচ্চমূল্যে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করেছে দরপত্রে অংশ নেওয়া একাধিক প্রতিষ্ঠান। তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নত ও ভূমি রেকর্ড আধুনিক করার লক্ষ্যে পরিচালিত এ প্রকল্পের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। সেখান থেকে এ প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটির পক্ষ থেকেও দরপত্রের অন্যায় মূল্যায়ন বিষয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

এ প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেয় ৫টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- স্যামসাং জেভেএ, সাইসোন জেভিএ, তাইহান জেভিএ, নেইবার জেভিএ (নেইবার সিস্টেম কোম্পানি লি.) ও হুন্দাই জেভিএ কোম্পানি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অংশগ্রহণকারী একটি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, তারা জানতে পেরেছেন স্যামসাং ছাড়া অন্য চারটি কোম্পানির দরপত্র ‘যোগ্যতাসম্পন্ন নয়’ বলে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যেসব ‘ত্রুটি’ দেখিয়ে ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে, সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য নয় এবং এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে কোনো কারণ দর্শানোও হয়নি। 

এই কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, কার্যত স্যামসাংই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখিত প্রযুক্তিগত যোগ্যতার মানদণ্ড ধারণ করে না। কারণ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দরপত্র যোগ্যতার অন্যতম শর্ত হলো, জিআইএস বা এলআইএস প্রকল্প সম্পর্কিত দরপত্রে শুধু এসএমই কোম্পানিগুলো অংশ নিতে পারবে। কিন্তু স্যামসাং দরপত্রের অভিজ্ঞতার আবশ্যিক শর্ত পূরণ করার জন্য অংশীদার হিসেবে যে হুন্দাই অটোএভারকে নিয়েছে, সেটি এসএমই প্রতিষ্ঠান নয়।

এ প্রতিষ্ঠান গাড়ির নেভিগেশন সেবা দিয়ে থাকে। স্যামসাংয়ের কাছে প্রয়োজনীয় সঠিক প্রযুক্তিও (জিআইএস/এলআইএস) ছিল না। তারা অন্য কোম্পানির সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে। এ ছাড়া স্যামসাং দরপত্রে অনেক কাগজপত্র নোটারাইজেশন ছাড়া এবং ফাঁকা জমা দিয়েছে। এরপরও নতুন ভূমি সচিব খলিলুর রহমান যোগ দেওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক তড়িঘড়ি করে স্যামসাংকে দরপত্র পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

গত ২৭ এপ্রিল দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই করপোরেশন দরপত্রের প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন এবং পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা, হুন্দাই করপোরেশন, কোরিয়ার একটি নেতৃস্থানীয় এন্টারপ্রাইজ, যার বিশ্বব্যাপী ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রয় টার্নওভারসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে এবং অবকাঠামো প্রকল্প সম্পাদনে বিশেষভাবে সক্ষম।

২০২২ সালে হুন্দাই কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশে ডিজিটাল ল্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম প্রকল্পের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে এবং ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। হুন্দাই কনসোর্টিয়ামের এক্ষেত্রে ২০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ৮০টিরও বেশি রেফারেন্স জমা দিয়েছে, যা এই শিল্পে ‘টপ’ প্লেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। অধিকন্তু হুন্দাই কনসোর্টিয়াম অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বাণিজ্যিক অফার দিয়েছে।’ 

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, মূল্যায়ন অন্যায়ভাবে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটা জেনে খুবই দুঃখিত। এই মূল্যায়ন যদি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়, আমরা নিশ্চিত যে, একটি প্রতিযোগিতামূলক মূল্য এবং দক্ষ প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারব; যা বাংলাদেশ সরকারকে প্রকল্প ঋণে সঞ্চয় করতে দেবে।’ চিঠিতে হুন্দাই একটি স্বচ্ছ দরপত্র ইভালুয়েশন কমিটির মাধ্যমে দরপত্র প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে। 

সম্প্রতি নেইবার সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকেও বাণিজ্যমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পুনরায় পরীক্ষার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। পাঁচ দরদাতার মধ্যে ১টি কোম্পানি পাস করেছে এবং চারটিকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারণ জানানো হয়নি। এটা সুস্পষ্ট ত্রুটি। যে চার কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তারা কোরিয়ার এলএমএস ব্যবসায় প্রযুক্তিগতভাবে সেরা। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক জহুরুল হক। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখন এ প্রকল্পটির দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সময় আছে। এরপর সময় বাড়ানো হতে পারে। টেন্ডারে ৫টি কোম্পানি অংশ নিয়েছিল। কে কে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে, পিপিআর অনুযায়ী তা মূল্যায়নের আগে বলা যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা সবার ক্ল্যারিফিকেশন নিয়েছি। পিপিআরে বলা আছে, নন-রেসপনসিভদের জানাতে হবে। তাদের নোটিস করা হবে। তাদের সঙ্গে একটি সভা হবে। সেখানে তাদের ত্রুটির বিষয়গুলো জানানো হবে। এটা হবে কন্টাক্ট সাইনিংয়ের আগে। 

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে। যা যা করা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত তা কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকে পাঠাতে হয়। এ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কিছুই হয়নি।’ স্যামসাংকে কাজ দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টা তেমন নয়, অভিযোগের তেমন কিছু নেই। তাড়াহুড়া করা হচ্ছে না। কারও টেন্ডার বাতিল করা হয়নি। দরপত্র মূল্যায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার কী ত্রুটি রয়েছে, তা জানার সুযোগ নেই। 

প্রকল্পের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক দরপত্রের ‘অন্যায় মূল্যায়ন’ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে- এমন বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। 

এ বিষয়ে ভূমি সচিব খলিলুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার দৃষ্টিতে এলে তিনি খতিয়ে দেখবেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশনের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘অবশ্যই যোগ্য কোম্পানিকে কাজ দেওয়া উচিত। এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের যদি এ প্রকল্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে ভালো হতো।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা