প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩ ২০:১৪ পিএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৩ ২২:২৪ পিএম
পবিত্র কাবাঘর। সংগৃহীত ফটো
রাজধানীর জুরাইনে অবস্থিত ‘এস এন ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরস’-এ টাকা জমা দেওয়া পাঁচ শতাধিক হজযাত্রীর ভিসার অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। হজে যাওয়ার জন্য জুরাইন রেলগেটের ব্যাংক এশিয়া বিল্ডিংয়ে অবস্থিত এজেন্সিটির মাধ্যমে নিবন্ধন করেছিলেন এসব হজযাত্রী। মঙ্গলবার এজেন্সির মালিক শাহ আলম হজযাত্রীদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর এ অনিশ্চয়তার দেখা দিয়েছে। এখন তাদের হজে যাওয়ার জন্য ভিসা খরচ বাবদ অতিরিক্ত লক্ষাধিক টাকা গুনতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ওই এজেন্সির মাধ্যমে ৯০ জনের সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ জনের ভিসা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য জানিয়েছেন ওই এজেন্সির ম্যানেজার মো. ইসহাক ফরিদ।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর হজে যাওয়ার জন্য আমাদের এজেন্সিতে ৫৩৮ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেন। হজযাত্রীদের মধ্যে অনেকের কিছু টাকা বাকি আছে। প্রায় ৩ কোটি টাকা এখনও পাওনা আছে। মঙ্গলবার থেকে এজেন্সির মালিক শাহ আলমের নিখোঁজের পর সংকটের সৃষ্টি হয়। তিনি হজযাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে কিছু কাজ করেছেন। সব হজযাত্রীর বিমানের টিকিটের টাকা ব্যাংকে রাখা আছে। এ ছাড়া সৌদি আরবে প্রায় ২০০ হজযাত্রীর হোটেল ভাড়া পরিশোধ করেছেন শাহ আলম। তবে কারও ভিসার টাকা পরিশোধ করেননি তিনি।’
ইসহাক ফরিদ আরও বলেন, ‘যেহেতু হজে যাওয়ার জন্য হজযাত্রীরা টাকা দিয়েছেন, তারা এখন না যেতে পারলে পুরো টাকা পানিতে যাবে। তাই আমরা এজেন্সির স্টাফরা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভিসার বিষয়টা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। ভিসা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ১ লাখ ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে হজযাত্রীদের থেকে। হাজিদের হোটেলে রাখার জন্য সৌদি আরবে বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ছাড়া আমাদের কাছে কোনো কিছু করার উপায় নেই। প্রায় পাঁচশ হজযাত্রী ভিসা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। আমরা ধাপে ধাপে তাদের পাঠানোর কাজ করছি। হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারাও আমাদের সহযোগিতা করছে।’
তিনি জানান, এজেন্সি মালিকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৩ সাল থেকে এই এজেন্সি চালাচ্ছেন তিনি। আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাব-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের হজে প্রেরণ করতে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ৯০ জনের ভিসা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর জন্য হজযাত্রীদের ভিসা বাবদ ১ লাখ ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।’
ভুক্তভোগী হজযাত্রী মো. দুলাল বলেন, ‘আমরা আজকে আবার এজেন্সিতে গিয়েছিলাম। আমাদের শুধু টিকিটের বিষয়টা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্টাফরা বলছে, ভিসা খরচ বাবদ ১ লাখ ২ হাজার ও হোটেলের খরচের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা নতুন করে দিতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আগে আমি ও আমর স্ত্রীর জন্য ১৩ লাখ টাকা এজেন্সির মালিককে দিয়েছিলাম। এখন আবার দিতে হবে এ টাকা। না দিলে যাওয়াও হবে না। আমাদের ফ্লাইট ২১ জুন। আগামী শনিবার ডেকেছে এজেন্সির স্টাফরা।’
আরেক হজযাত্রী তাজউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখন ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষায় আছি। আজকে আমার ভিসা নিশ্চিত হয়েছে। আজকে ৯০ জনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে চার থেকে পাঁচজনের ভিসা হয়নি। বুধবার রাতে মামলা করতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু এজেন্সির ম্যানেজার আমার ভিসা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে মামলা করিনি। ভিসা, হোটেল ও খাবার বাবদ অতিরিক্ত প্রায় ৩ লাখ টাকা আরও খচর হয়েছে। এর আগে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও ওই এজেন্সির মালিককে পাওয়া যায়নি। হজে পাঠানোর জন্য এজেন্সির কর্মচারী কাজ করছে। ভিসার জন্য অতিরিক্ত টাকা লাগছে, এটা শুনেছি। হাজিরাও টাকা দিয়ে ভিসা নিশ্চিত করছেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণে রেখেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও শান্ত রাখার জন্য এজেন্সির সামনে পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছি। আমরা হাবকে জানিয়েছে। তারাও বিষয়টা দেখছে।’