প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩ ১৭:৫৪ পিএম
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। ফাইল ছবি
দেশের পার্বত্য অঞ্চল আগামীর বাংলাদেশের সম্পদ হবে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি বলেছেন, সরকার সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন করেছে। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় আগামীতে আমরা (পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ) দেশের জন্য বোঝা নয় বরং সম্পদ হয়ে উঠবো। আমরা এখন পোশাক রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছি। খুব তাড়াতাড়ি পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে আমরা সেভাবে অবদান রাখবো।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে পার্টনারশিপ ফর রেজিল্যান্ট লাইভলিহুডস ইন সিএইচটি রিজিওন (পিআরএলসি) প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপি যৌথভাবে এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য-পুষ্টি, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান আছে। সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং ইউএনডিপির যৌথ ব্যবস্থাপনায় আজ যে নতুন চার বছর মেয়াদী প্রকল্পটি শুরু হতে যাচ্ছে সেটি তিন পার্বত্য জেলার আট উপজেলার ২০ হাজার পরিবারের প্রায় ৯৮ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকায় সহায়তা করবে। উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে নারীদের (প্রায় ৭০ শতাংশ) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে এ প্রকল্প রাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অন্যান্য প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রায় ৩০ ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবারের ৯৮ হাজার মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাবে। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে এক মিলিয়ন ইউরো। এর মেয়াদ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের যাবতীয় কারিগরি সহায়তা দেবে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।
মিস ভ্যান নুয়েন বলেন, ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবন জীবিকা উন্নয়নে কাজ করে আসছে। প্রকল্প থেকে ভূমি কমিশনকে সহায়তা দেওয়া হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আমরা আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হব।
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, পিআরএলসি একটি সমন্বিত প্রকল্প যেখানে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এমজেএফ, ইউএনডিপি, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং কমিউনিটি একসঙ্গে কাজ করবে। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমন্বয়ের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করবে। সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে কৃষিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ প্রকল্প নারীদের ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, সম্পদে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। কৃষিতে উৎপাদন বাড়বে, আয় ও পুষ্টি সচেতনতা বাড়বে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের পাশে থাকায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং ইউএনডিপিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি অতিদরিদ্র পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সহায়তা করবে। অন্যদিকে সরকারের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং হেড অব মিশন চার্লস হোয়াইটলি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান, ইউএনডিপির ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি মিস ভ্যান নুয়েন। সভাপতিত্ব করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্য নিরুপা দেওয়ান। বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর আদিবাসী নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।