প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ১৯:১২ পিএম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩ ১৯:৩৮ পিএম
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। সংগৃহীত ফটো
চলমান তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান দাবি করেছেন, গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে পানির সংকট বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার এমডি বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদাও বেড়েছে। পাইপের গরম পানি ব্যবহার করতে না পারায় বেড়েছে অপচয়ও।’ বিদ্যুৎ সংকট দূর হওয়া বা বর্ষা না এলে পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেননি তাকসিম এ খান।
এ দিন সংবাদ সম্মেলন করে পানির দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা ওয়াসার এমডি। তিনি নগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার পানির পাম্পগুলোয় বিদ্যুতের একাধিক লাইন বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তাকসিম এ খান জানান, ঢাকায় দৈনিক ২৮৫ থেকে ২৯৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা আছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ২৪০ কোটি লিটারের মতো।
ঘাটতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বিদ্যুতের জন্য পাম্প চালানো যাচ্ছে না। এতে ঢাকার কিছু এলাকার মানুষ পানি পাচ্ছেন না। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বলেছি, ওয়াসার পাম্পে ডুয়েল লাইন যেন করে দেওয়া হয়।’
গরম বাড়ায় পানির চাহিদা বেড়েছে আবার পানির অপচয়ও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একদিকে পানি কম উৎপাদন হচ্ছে। পাইপের পানি গরম থাকায় অনেকে দীর্ঘ সময় পানি ছেড়ে ঠান্ডা পানি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।’ আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পানির সংকট কিছুটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঢাকা ওয়াসার এমডি।
সাংবাদিকদের নিন্দা : এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সব গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিটের সাংবাদিকরা। এ দিন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন এক যৌথ বিবৃতিতে সব গণমাধ্যমের জন্য ওয়াসার দুয়ার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান। আগে থেকে নির্ধারিত থাকলেও এ সংবাদ সম্মেলনে মূল ধারার বেশিরভাগ গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানায়নি ঢাকা ওয়াসা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, রাজধানীতে চলমান ভয়াবহ পানি-সংকট নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ওয়াসা ভবনে নামসর্বস্ব একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। কিন্তু এ সংবাদ সম্মেলনের কোনো চিঠি ঢাকা ওয়াসার জনতথ্য বিভাগ থেকে কোনো গণমাধ্যমকে পাঠানো হয়নি। বহিরাগত একজন তথাকথিত সংবাদকর্মীর মাধ্যমে কিছু মিডিয়াকে ডেকে নেওয়া হয়। এ রকম অশোভনীয় সংবাদ সম্মেলন কোনোভাবেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সংবাদ সম্মেলন সব গণমাধ্যমের জন্যই উন্মুক্ত থাকা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। অতীতেও বর্তমান এমডি ওয়াসার জনতথ্য বিভাগকে না জানিয়ে এ রকম তথাকথিত সংবাদ সম্মেলন করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা অতীতেও এ বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছি। তারপরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছেন এমডি। এতে এমডির দুর্নীতি ও অসাধুতা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এমন লুকোচুরি জনমনে সন্দেহ ও সংশয়কে আরও ঘনীভূত করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ এবং সংবাদ সম্মেলন কাভারের অধিকার সব সাংবাদিকেরই রয়েছে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বরাবরই পেশাদার সাংবাদিকদের এড়িয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে থাকেন। বেশিরভাগ সংবাদ সম্মেলনেই সাংবাদিকদের জানানো হয় না। পছন্দের দু-চারজনকে নিয়ে এসব সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
আমরা বর্তমান এমডির আমলে দেখে আসছি, গণমাধ্যমকর্মীদের ওয়াসা ভবনে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অনেক সময় পছন্দের গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া তিনি ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করতে দেন না। কিন্তু ওয়াসা একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এ রকম প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ উন্মুক্ত থাকা উচিৎ বলে আমরা মনে করি।
তারা আরও বলেন, বিভিন্ন সময় ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা, পছন্দের গণমাধ্যমকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করাসহ ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের নানা অভিযোগ রয়েছে। এবারের ঘটনা এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা আরও ঘনীভূত করল। এর আগে ১০ জানুয়ারি সাংবাদিকদের না জানিয়ে গোটা কয়েক মিডিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তাকসিম এ খান। ওই দিন বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে গেলে মূল ফটকেই তাদের আটকে দেওয়া হয়। আমরা আশা করি, ওয়াসার এমডির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং সব গণমাধ্যমের জন্যই ওয়াসা উন্মুক্ত থাকবে।