প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩ ২১:৩১ পিএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩ ০০:২৮ এএম
দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট কেন সৃষ্টি হয়েছে—সংসদে তার ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের কষ্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘সেটা হচ্ছে বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থের জোগানটা সমস্যা হয়ে গেছে। এটা বেশি দিনের জন্য না। আমরা মনে করি, ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনারা সবাই একটু ধৈর্য ধরেন।’
মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২–২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যেব জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘কোভিড আমাদের অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। একটি করেছে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে, আরেকটি করেছে স্বাস্থ্যগতভাবে মেমোরিটা লস করে দিয়েছে। আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই ১৬ ঘণ্টা, ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। সেখান থেকে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি।’
চলতি অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। তার এই দাবিতে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তবে আলোচনায় অংশ নেন ছয়জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে তাতে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ’বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী গোটা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিয়েছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু হঠাৎ করে কী হলো যে বিদ্যুৎ চলে গেল। আগেই যদি কয়লা বা ডিজেল আমদানি করা যেত, আজকের এই সমস্যা হতো না। আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন কমবেশি ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এই লোডশেডিং আরও বাড়বে। বিল পরিশোধ না করার কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিল তো মানুষের বাকি নেই। গ্রাহকরা তো সবাই বিল দিচ্ছেন। তাহলে এই বিল কেন বাকি থাকছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ ছিল না, খাম্বা ছিল। এখন বিদ্যুৎ আছে, খাম্বা নেই। ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। টাকা শর্টেজ। মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছে। মোগল আমলে মানুষ যে কষ্টে ছিল এখন তার থেকে বেশি কষ্টে আছে। ১৫৩টি কেন্দ্রের সবগুলোতে কম উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিল বিদ্যুৎ। সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল।’
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে কিন্তু মন্ত্রীর কোনো কথা নেই। কেন? জনগণকে কনভিন্স করতে হবে। গণশুনানি করে বিষয়টি জানাতে হবে। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কেউ বলতে পারেন না। লোডশেডিংয়ের তথ্য জানাতে হবে। কোথায় অব্যবস্থাপনা রয়েছে, সেটা দেখতে হবে। কর্মকর্তাদের ভেতর... বিভিন্ন জায়গায়। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে। তারা যেন আপনাদের সুনাম নষ্ট করতে না পারে।’
জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারি। পিক আওয়ারে সন্ধ্যাবেলায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং বর্তমানে চলছে।’
সংসদ সদস্য বলছেন,
আমরা প্রচার করছি না, তা নয়। আমি বারবার বলে আসছি, প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে
দিয়েছি, বিজ্ঞাপন প্রচার করছি। আমরা কষ্টটা সবার সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি।
সবাইকে জানিয়েছি কোথায়, কীভাবে হবে এবং মিডিয়াতে বলা হয়েছে বারবার।
লোডশেডিংটা আকস্মিক, এটা বেশি দিন থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সময়মতো কয়লার জন্য এলসি করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুর ওপর চিন্তা করে আমরা সময়মতো কয়লাটা আনতে পারিনি। যার কারণে পায়রার এ অবস্থা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্ল্যান্ট চালু করে দেব।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হবে, পায়রা চালু হবে। রামপাল চলছে। এসএস পাওয়ার চালু হয়ে যাবে। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছি। আরও নিয়ে আসব। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য ধরি, তাহলে যে সমস্যা দেখতে পাচ্ছি সেটা পার হতে পারব।’
বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং আছে বলেও সংসদকে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা এই তথ্য বারবার প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি। বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছি। আমরা কষ্টটা সবার সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি। সবাইকে জানিয়েছি কোথায় কীভাবে হয়।’
মধ্যরাতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের ব্যবহার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আগে ছিল না। অটোরিকশা সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। আমরা তো বন্ধ করিনি। সেগুলোও চালু রেখেছি। সাধারণ মানুষ যাতে সেটা ব্যবহার করতে পারে। ৪০ লাখের মতো অটোরিকশা আছে দেশে। আমরা তাদের ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ করছি।’