× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা হারাচ্ছে ইসি, সংসদে বিল

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩ ২২:১১ পিএম

আপডেট : ০৫ জুন ২০২৩ ২৩:৩০ পিএম

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এতে সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম হলেও তফসিল থেকে ফলাফল ঘোষণার যেকোনো পর্যায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা হারাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট বন্ধের ক্ষমতা শুধু ভোটের দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে অনিয়মের কারণে যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির।

আরপিওর ৯১ (ক) উপধারায় ‘ইলেকশন (নির্বাচন)’ শব্দের পরিবর্তে ‘পোলিং (ভোটগ্রহণ)’ শব্দ প্রতিস্থাপনসহ কয়েকটি সংশোধনী পাস করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়।

এ ছাড়া সংশোধনীতে নতুন ৯১(ক) (কক) উপধারা যুক্ত করে ইসিকে অনিয়ম হওয়া ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বন্ধের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে পুরো নির্বাচনের ফলাফল নয়, কেবল যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে কমিশন।

জানা যায়, আরপিওর ১৪টি স্থানে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংসদে এ বিল উপস্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর মধ্য কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন।

বিল উপস্থাপনের বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী বলেন, ’প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’

বিলে আনা সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ’সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিল সাত দিনের পরিবর্তে আগের দিন পরিশোধ করে প্রার্থী হওয়া, নির্বাচনে পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর সনদ জমা দেওয়া এবং গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কিছু বিষয়ে বিধান করার জন্য আরপিও সংশোধন করা প্রয়োজন।’

সংশোধিত আরপিওর বিষয়ে কথা বলতে ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানাকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে এর আগে ২১ মে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আরপিওর ৯১(ক) উপধারা সংশোধনীর কোনো প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন দেয়নি। নির্বাচন চলাকালে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা খর্ব হয়নি। আইনে এটি এখনও আছে। এর সঙ্গে ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার ক্ষমতা চেয়ে নতুন একটি ধারা আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল নির্বাচন কমিশন। মন্ত্রিসভা এটার আংশিক অনুমোদন দিয়েছে। এতে কমিশনের ক্ষমতা কিছুটা বাড়বে। তবে কমিশন যেভাবে পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত করার ক্ষমতা চেয়েছিল, সেটা অনুমোদন হলে আরও ভালো হতো।

ইসি সূত্র জানায়, ‘নির্বাচন’ শব্দের দ্বারা তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পুরো কার্যক্রমকে বোঝানো হয়। ৯১(ক) উপধারার ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ছাড়াও তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে। সংসদে ওঠা সংশোধনী প্রস্তাবে ‘ইলেকশন’ শব্দের স্থলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এটি পাস হলে ইসি শুধু ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় ভোট বন্ধ করতে পারবে।

সংসদে তোলা প্রস্তাবে আরও দেখা গেছে, আরপিওর ৯১(ক)-এর পর (কক) উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে ফল ঘোষণার পর থেকে গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত কোনো ভোটকেন্দ্র বা কেন্দ্রসমূহের ফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, প্রভাব বিস্তার ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং তা ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে, তাহলে সেসব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করতে পারবে। যদিও নির্বাচন কমিশন পুরো আসনেরই ফল বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল। সরকার ইসির ওই প্রস্তাব আংশিক রেখেছে। যদিও এ সংশোধনীতেও ইসির সায় রয়েছে।

এ বিষযে সংসদে আইনমন্ত্রী আনসিুল হক বলেন, ’এবার সংশোধনী আনা হয়েছে ৯১(ক)(কক) -এ। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো আসনের দু-তিনটি কেন্দ্রে গন্ডগোল দেখা দেয়, তাহলে সেগুলো বন্ধ করতে পারবে ইসি। ওই দু-তিনটির জন্য বাকি কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়নি। তবে ৯১ (ক) হিসেবে একটা অনুচ্ছেদ রয়েছে; তাতে বলা রয়েছে- ইসির ক্ষমতা রয়েছে পুরো কনস্টিটিউয়েন্সির নিবন্ধন বন্ধ করে দিতে পারে। ইসি যদি দেখে কোনো নির্বাচনী এলাকায় সমস্যা হচ্ছে, জবরদস্তি থাকে, গন্ডগোল, ভোটদানে বাধা দান হলে পুরো নির্বাচনী এলাকা বন্ধ করে দিতে পারবে।

আরপিওতে প্রার্থী হতে টিআইএন এবং ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের কপি জমা, প্রার্থিতা বাছাইয়ে বৈধ হলেও তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ, দল নিবন্ধনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বেও প্রতিশ্রুতি লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা এবং ভোটের সংবাদ সংগ্রহে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দিলে কিংবা যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করলে শাস্তি-সাজার বিধানসহ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে বিলে।

বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দেন জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ’সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৫২ বছর পর হলেও নির্বাচন কমিশন (গঠন) আইন করেছি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন থাকবে। আমরা আইন করতে যাচ্ছি। আইন করে যদি স্বাধীনতাটাকে ক্যানসেল করে দিই, তাহলে কমিশন কীভাবে স্বাধীন থাকবে?’

তিনি বলেন, ’আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। সেখানে আরপিওতে দেখলাম গাইবান্ধার নির্বাচন খারাপ হয়েছিল বলে কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে। জানি না কী কারণে আইনমন্ত্রী আবার এখন আনলেন নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না; শুধু ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে পারবে। যেখানে গন্ডগোল হয়েছে সেটা বন্ধ করতে পারবে। মানে ইসির স্বাধীনতায় (ইসির) হস্তক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন যদি সকাল থেকে মনে করেন এখানের অবস্থা খারাপ, গাইবান্ধার মতো পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এই স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ’এই সংশোধনী সংবিধান বা গণতন্ত্রের পরিপন্থি নয়। আইনের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি দেখে কোনো নির্বাচনী এলাকায় সমস্যা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে, গন্ডগোল, ভোট দিতে বাধা দান দেখা গেলে পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন ইলেকশন কমিশন বন্ধ করে দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ’এখানে সংশোধনী হলো, কোনো একটি পোলিং সেন্টারে যদি গন্ডগোল দেখা দেয়, যেমন ধরুন : আমার নির্বাচনী এলাকায় ১১৪টি পোলিং সেন্টার আছে। এর দুটি কি তিনটিতে যদি গন্ডগোল, জোরজবরদস্তি, সহিংসতা এগুলো হয়, তাহলে এই দু-তিনটায় নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারবে ইসি। কিন্তু এর জন্য ১১১টির কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতাটা দেওয়া হচ্ছে না। এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থিও নয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা