× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বড় চ্যালেঞ্জ বিশাল ঘাটতি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ১২:১৯ পিএম

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৪:৫১ পিএম

বড় চ্যালেঞ্জ বিশাল ঘাটতি

ডলার সংকট, উচ্চমূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করল সরকার। যদিও ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেটকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার বলে অভিহিত করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট করতে বরাদ্দও রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই বাজেট বাস্তবায়নে বাজেট ঘাটতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। হিসাব বলছে, প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতি দেশের মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আগামী এক বছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ স্লোগান সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী জানান, ঘাটতি বাজেটের ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ খাত (ব্যাংকঋণ) থেকে। বাকি ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বৈদেশিক (বিদেশি ঋণ ও অনুদান) উৎস থেকে নির্বাহ করা হবে।

ব্যাংক খাত থেকে ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) অভ্যন্তরীণ উৎস ব্যাংক খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সেখানে ৮৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। কারণ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ব্যাংক খাত। 

অর্থের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল সরকার। অর্থবছরের শুরু থেকেই এ ধারাবাহিকতা লক্ষ করা গেছে। কারণ তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে তেমন একটা ঋণ দিতে পারেনি। বেশিরভাগ ঋণ এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা নিয়েছে নতুন টাকা ছাপিয়ে।

সঞ্চয়পত্র 

আগামী বছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। কিন্তু গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নিধারণ করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২০ হাজর কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৬৮ হাজার ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয় ৭১ হাজার ৬১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১০ মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনও তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

বিদেশি উৎস থেকে ঋণ

নতুন অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সরকার। কারণ বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ ও অনুদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদেশি উৎস থেকে অর্থ নির্বাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি উৎস থেকে অর্থ নির্বাহের লক্ষ্য ৭ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা বেশি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার ৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলর = ১০৮ টাকা)। জুন পর্যন্ত হিসাব পাওয়া গেলে এই ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সাল শেষে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯৬ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সরকারের নেওয়া বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৭১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন এবং বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে এ বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের কোনো সামঞ্জস্য নেই। মূল্যস্ফীতি কমানো, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। কিন্তু যেই বাজারে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে, সেখানে সরকার যদি ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমানো অসম্ভব। মূল্যস্ফীতির প্রক্ষেপিত লক্ষ্য ৬ শতাংশের নিচে আসবে কীভাবে আমার জানা নেই। ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে তার প্রভাব পড়বে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। অতিদরিদ্রদের জন্য সামান্য কিছু থাকলেও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছুই নেই। এসব খেটে খাওয়া মানুষ বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ালে কর্মসংস্থান বাড়ত। সঙ্গে বৃদ্ধি পেত উৎপাদন। মূল্যস্ফীতিও কমে আসত। এক কথায় বলতে গেলে এটা ‘চ্যালেঞ্জের মুখে গতানুগতিক বাজেট’।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা