× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ১১:৩৫ এএম

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৪:৫২ পিএম

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। ১১টি অধ্যায়ে বিস্তৃত বাজেট বক্তৃতার সপ্তম অধ্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের কর্মপরিকল্পনা ও নীতি-কৌশল প্রণয়নের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। 

বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। তবে বাজেটে সফটওয়্যার উৎপাদন এবং কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আরোপ, আমদানিতে গড়ে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এর ফলে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রাতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। 

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের উদ্যোগগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। স্বপ্নের সেই স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে চারটি মূল স্তম্ভÑ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমির ওপর ভিত্তি করে। 

স্মার্ট বাংলাদেশের ‘স্বপ্নময়’ চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে সাড়ে ১২ হাজার মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ; চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব জিডিপির অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ; শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সাক্ষরতা অর্জিত হবে; সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে; স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে; তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় ‘স্মার্ট রাজস্ব ও কর ব্যবস্থাপনা’ ‘স্মার্ট কৃষি’ ‘স্মার্ট স্বাস্থ্য’ ‘স্মার্ট শিক্ষা’সহ সবক্ষেত্রে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন। সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ, তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণাগার চালু এবং স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তোলার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পাঠ্যক্রম (কারিকুলাম) তৈরির বিষয় তুলে ধরেছেন। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে যে স্মার্ট বাংলোদেশের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন, সেটিই বাজেট বক্তৃতায় আরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। 

বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম। এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ২৮ শতাংশ তরুণ। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তারুণ্যের শক্তিকে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অন্যতম উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম এবং তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আগামী দিনগুলোতে তরুণরাই হবে উন্নত বাংলাদেশের পথে আমাদের স্মার্ট অভিযাত্রার অন্যতম সারথি।

তিনি বলেন, ‘তরুণ-তরুণীসহ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ-দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক, দক্ষ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী মানবসম্পদে রূপান্তরের অব্যাহত ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ আমাদের উৎপাদন শক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে তরুণ-তরুণীদের কাজের সুযোগ বাড়ানো হবে। প্রথাগত কর্মসংস্থানের ধারণা থেকে বের হয়ে এসে তরুণ-তরুণীরা বিভিন্নমুখী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগে নিজেদের নিয়োজিত করবে, নিজের ও সমাজের জন্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেবে, আমাদের তরুণদের মধ্যে আমরা সে ধরনের প্রণোদনার সঞ্চার করতে চাই।’

সফটওয়্যার শিল্পে মূসক ও আমদানি শুল্ক

বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বিস্তৃত হলেও সফটওয়্যার উৎপাদন, কাস্টমাইজেশন ও আমদানি- এই তিন পর্যায়েই কর বাড়ানো হয়েছে। দেশে সফটওয়্যার উৎপাদন ও কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে এতদিন কোনো মূসক ছিল না। এবারের বাজেটে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া সফটওয়্যার আমদানিতে অপারেটিং, ডেটাবেজ ও ডেভেলপমেন্ট টুল- এই তিন ধরনের সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। এবার গড়ে সব ধরনের সফটওয়্যার আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সফটওয়্যার উৎপাদন ও আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ‘দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষণ’ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কারণ অপারেটিং, ডেটাবেজ ও ডেভেলপমেন্ট টুল- এই তিন ধরনের সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে গড়ে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে দেশে কার্যত সফটওয়্যার উৎপাদন বড় ধরনের সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, এ তিন ধরনের সফটওয়্যার আমদানির বিকল্প নেই এবং এগুলো ছাড়া দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদকের পক্ষে অন্যান্য সফটওয়্যার উৎপাদন করাও সম্ভব নয়। এ ছাড়া মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে তিনটি ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এভাবে করারোপ করে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে বিপর্যস্ত করা হলে স্মার্ট প্রযুক্তির বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইর যুগ্ম সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘দেশীয় মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প এমনিতেই সংকটে আছে। এ অবস্থায় হ্যান্ডসেটের উৎপাদনে ২ শতাংশ হারে মূসক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ দাম বাড়লে বিক্রি কমে যাবে।’ 

তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবিরের মত- ‘সফটওয়্যার উৎপাদন ও আমদানিতে কর বাড়িয়ে কোনোভাবেই সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। কর বাড়ার কারণে সবাই অনলাইন থেকে বিকল্প পথে সফটওয়্যার সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে অপারেটিং ও ডেটাবেজ সফটয়্যারের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদন শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’ 

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট ডিভাইস ছাড়া স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না। বর্তমান অবস্থায় স্মার্টফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে দাম বাড়বে, যে কারণে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হতে পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা