× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বড় আশা, বাস্তবায়ন কঠিন

মজুমদার বাবু

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ০৯:১৭ এএম

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম

বড় আশা, বাস্তবায়ন কঠিন

বলা হয়ে থাকে- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। সামষ্টিক অর্থে একটি জাতিও তার স্বপ্নের সমানই বড় হয়। অর্থমন্ত্রীও জাতির সামনে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে নতুন অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করেছেন, সেটা যেন একরকম স্বপ্নের সোনালি মোড়কে আবৃত। নির্বাচনের বছরে বড় আশা নিয়ে বিশাল বাজেটই উপস্থাপন করেছেন তিনি। যেখানে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে বর্তমানের সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে সাড়ে ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার বড় আশাও দেখিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার দুরূহ সংকল্পও প্রকাশ করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় তার বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে এলেও তার চেয়ে বেশি প্রতিধ্বনিত হয়েছে নানা প্রত্যাশা, পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির কথা। অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী বছরের বাজেট প্রস্তাবে যেসব আশার বাণী শোনানো হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন শুধু কঠিন নয়, অত্যন্ত কঠিন হবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনেকাংশেই পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

সংসদে স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। যেখানে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ৩ শতাংশের নিচে। আর চরম দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪/৫ শতাংশে, কর জিডিপি বেড়ে হবে ২০ শতাংশ। বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। 

নির্বাচনের বছরে স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক সুবিধা সম্পর্কে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে ক্যাশলেস ও পেপারলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।

২০৪১ সাল মাথায় রেখে প্রণীত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন খরচ দাঁড়াবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। অন্যটি হলো উন্নয়ন ব্যয়, যার পরিমাণ মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এই উন্নয়ন খরচ মেটাতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে একই সমান অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়েছে। যদিও এই ঘাটতি অর্থায়নের সংকুলান কীভাবে হবে তার কোনো রূপরেখা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ছিল না।

বিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার যে সাড়ে ৫ শতাংশ ঘাটতি অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছিল, তা বাস্তবায়নে হোঁচট খেতে হয়েছে। পরিশেষে সংশোধিত বাজেটে তা ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে হয়েছে। আর বিদেশি উৎস কিংবা ব্যাংক খাত থেকে টাকা জোগাড়ের উপায় না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে উন্নয়ন খরচ মেটাতে হয়েছে। ফলাফল মূল্যস্ফীতি ছুঁয়েছে ১০ শতাংশের কোটা। অবশ্য এজন্য অভ্যন্তরীণের চেয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিই বেশি দায়ী। এখনও বৈশ্বিক কারণগুলোর একই অবস্থা বিরাজমান। আবার ব্যাংক খাতে ২০২২-২৩ বাজেট প্রণয়নের সময়ের চেয়ে আরও বেশি তারল্য সংকট বিরাজমান। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিদায়ি বছরের চেয়ে ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ধার করার পরিকল্পনা করেছেন। যদি এই লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তাহলে আরও বেশি টাকা ছাপাতে হবে। ফলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার কোনো উপায়ই থাকবে না। আবার ব্যাংক খাত থেকে টাকা নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে গেলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নেমে আসবে তলানিতে। কমবে কর্মসংস্থান, ফলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় রয়েছে। এতগুলো বিষয়ের সমন্বয় কীভাবে করবেন তার কোনো বার্তা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় মেলেনি। 

অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় এটা বলেছেন যে- বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতিও ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ডলার বা রিজার্ভ সংকটকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তার রূপরেখাও অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় অনুপস্থিত। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সঠিক মূল্যে পণ্য আমদানি নিশ্চিত করা এবং ঋণপত্র খোলা, নিষ্পত্তি ও আনুষঙ্গিক বিষয় প্রক্রিয়াগত বিধি আরোপ ও বাস্তবায়ন এবং নজরদারি আগামীতেও চলমান থাকবে। রেমিট্যান্সের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়ের উদ্যোগও তিনি নেবেন। তবে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঘাটতি অর্থায়ন কীভাবে করবেন, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। 

অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় মোট অধ্যায় রয়েছে ১১টি। পুরো বাজেট বক্তৃতায় সরকারের নানা ধরনের উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হয়। তবে বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী পরোক্ষ করের ওপর জোর দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে নিত্যব্যবহার্য অনেক পণ্যেরই দাম বাড়ানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে- লেখার কলম, এলপিজি, ভ্রমণ খরচ, টিস্যু ও গৃহস্থালি পণ্য, ফেসওয়াশ, মোবাইল ফোন, স্বর্ণের বার, জমি ও ফ্ল্যাট, সিগারেট, জর্দা ও গুল, বাসমতী চাল, কাজুবাদাম, খেজুর, সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এ তালিকায় আরও রয়েছে দামি গাড়ি, আমদানি করা ফ্রিজ, ফ্যান, এস্কেলেটর, প্যাকেজিং, মাইক্রোওভেন, সফটওয়্যার, ইলেকট্রিক সিগারেট, আমদানি করা বাইসাইকেল, কম্পিউটার, কোমল পানীয়, চশমা ও সানগ্লাস ইত্যাদি। 

দাম কমার তালিকায় থাকা পণ্যের সংখ্যাটি তুলনামূলক কম। এতে রয়েছে- বিমানের ইঞ্জিন, মাংস, দেশে উৎপাদিত এলইডি বাল্ব ও সুইচ-সকেট, ই-কমার্সের ডেলিভারি চার্জ, মিষ্টিজাতীয় খাবার, অভিজাত বিদেশি পোশাক, ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম, স্যানিটারি ন্যাপকিন, সাবান ও শ্যাম্পু, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। যদিও বাজেটে মোটা দাগে কর আহরণের কিছু কৌশল দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সেবা গ্রহণের ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা 

আগামী অর্থবছর থেকে শূন্য রিটার্ন জমা (করযোগ্য আয় না দেখিয়ে রিটার্ন জমা) দিলেও ২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে ওই টাকা কর হিসাবে দিতে হবে। কর অফিস থেকে রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যাবে না। কর আদায় বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিলেও স্লিপ পেতে তাকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। অন্যদিকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে ন্যূনতম কর দিয়ে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ ধরনের অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে যাদের আয় আছে, অথচ সরকারের কাছ থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতাও আছে- এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।

ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারার (টিআরপি) বিধি প্রণয়ন

অর্থমন্ত্রীর মতে, দেশে কর প্রদানে সক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে কর জিডিপির অনুপাত। বর্তমানে টিআইএনধারী (ট্যাক্সপেয়ার’স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) করদাতার সংখ্যা ৮৮ লাখ। গত অর্থবছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা হয়েছে ৩২ লাখ। তবে এই সংখ্যা আশানুরূপ নয়। তাই উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করে করদাতার নেট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টিআরপি বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এটা হলে, নতুন অর্থবছরে নতুন করদাতার খোঁজে ঘরে ঘরে যাবে বেসরকারি খাতের এজেন্ট। এজেন্ট যে কর ঠিক করে দেবেন, সেটিই দিতে হবে করদাতাকে। করদাতা যেটুকু কর দেবেন, তার থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পাবেন এজেন্টরা। এ ধরনের বিধান কর খাতে হয়রানির জন্ম দেবে এবং ঘুষ ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়াবে বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া ভ্যাট আদায় বাড়াতে নতুন অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডির ব্যবস্থাপনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভ্যাট আদায়েও বেসরকারি খাত যুক্ত হলো। বিশেষজ্ঞরা এ বিধানেরও সমালোচনা করেছেন। এতেও দুর্নীতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সারচার্জ ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা

সারচার্জ আহরণের বিধান পরিপালন সহজ করা এবং মধ্যবিত্তদের করভার লাঘবে এ বছর ব্যক্তি করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নিট সম্পদের মূল্যের ভিত্তিতে করদাতার সারচার্জ আরোপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সীমা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটিতে বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে মূলত উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ১০ শতাংশ এবং এর সর্বোচ্চ সীমা ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে সারচার্জের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

অপরিবর্তিত থাকবে করপোরেট করহার

করপোরেট করহার অপরিবর্তিত থাকছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করদাতার সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি, ব্যয় এবং বিনিয়োগ আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে লেনদেনের শর্ত পরিপালনের ভিত্তিতে নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহ এবং ভিন্নরূপে সংজ্ঞায়িত নয়, এমন আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্যসত্তার ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার ৩০ শতাংশ থেকে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক করা এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহের মতোই শর্তপালন সাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বিদ্যমান করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রে বার্ষিক নির্ধারিত পরিমাণ নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যতীত সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ এবং সকল প্রকার আয় অথবা প্রাপ্তি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে ব্যর্থ হলে করহার ২০ শতাংশের জন্য প্রযোজ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। একইভাবে শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশের জন্য প্রযোজ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর করপোরেট করহার কমানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর দেশের কর-জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য আদায়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় করপোরেট করহার এর বিদ্যমান কাঠামোটি বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা

প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করার কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মুদ্রাস্ফীতির কারণে করদাতাদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং মহিলা ও ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।

সর্বজনীন পেনশন আগামী অর্থবছরেই

এদিকে বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির পরীক্ষামূলক পাইলট প্রজেক্টের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। প্রস্তাবিত স্কিম অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর পর্যন্ত এবং ৫০ বছর বয়সি একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

ভর্তুকি থাকছে

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, চাইলেও সহসাই ভর্তুকি তুলে দিতে পারবেন না। এজন্য সময় লাগবে। তাই নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি বেড়েছে। মোট ভর্তুকি পরিকল্পনা করা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির এ টাকার বড় অঙ্কই সামাজিক নিরাপত্তা, সার, বিদ্যুৎ, জ্বালানিতে খরচ করা হবে। অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভর্তুকি কমানোর জন্য এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া সময়ে সময়ে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের একটি ফর্মুলার পথনকশা তৈরি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এ বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ নতুন পদ্ধতিতে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা যাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা