রাশেদুল হাসান
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১২:৫২ পিএম
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩ ১৯:৫২ পিএম
পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত দয়াগঞ্জ রেলসেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় নিচ দিয়ে উঁচু গাড়ি যেতে পারছে না। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু
পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত দয়াগঞ্জ রেলসেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় নিচ দিয়ে বড় গাড়ি যেতে পারছে না। রেল কর্মকর্তারা আগেই বিষয়টি জানলেও সেতুটি উঁচু করার সুযোগ ছিল না বলে তাদের ভাষ্য। তবে বুয়েটের একজন অধ্যাপক বলেছেন, রাস্তাটাকে গুরুত্ব দিলে সমাধান বের হয়ে আসত।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর দয়াগঞ্জ রেলসেতুর নিচ দিয়ে বেশি উঁচু যান যেতে পারছে না। এই সেতুর নিচে দিয়ে যেতে হয় দয়াগঞ্জ থেকে ধোলাইপাড় ও শহীদ ফারুক সড়কের দিকে কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে বংশাল, গেণ্ডারিয়া ও ওয়ারীর দিকে। তাদের এখন অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে হয়।
সেতু এলাকার মুন্সি স্টিল অ্যান্ড টিউব নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রেল সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করার পর আর কোনো বড় বাস যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আগে এখান দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাবল ডেকার বাস যেত। কয়েক মাস হলো এখন আর যেতে পারে না।
রেল কর্তারা জানিয়েছেন, সেতুটির উচ্চতা ১৪ ফুট। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে তাদের ডাবল ডেকার বাসের উচ্চতা ১৪ ফুট ৭ ইঞ্চি থেকে ১৫ ফুট। তা ছাড়া এক্সকাভেটর, ক্রেন, মালবোঝাই গাড়ি ১৫ ফুটের বেশি উঁচু হতে পারে।
বিষয়টি জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধোলাইপাড় হয়ে নারায়ণগঞ্জ চলাচলকারী বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসের চালক মো. মুজিবুর রহমান জানান, তিনি এখন দয়াগঞ্জ রেলসেতুর নিচ দিয়ে যেতে পারছেন না।
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার গাড়ি দয়াগঞ্জ রেলসেতুর নিচ দিয়ে যায়ও না আসেও না। আমি এখন নারায়ণগঞ্জ থেকে জুরাইন-গেণ্ডারিয়া রুট দিয়ে আসা-যাওয়া করি।’ আগে তিনি দীর্ঘদিন এই সেতুর নিচে দিয়ে আসা-যাওয়া করলেও ২০২১ সালের পর থেকে আর এ রুট ব্যবহার করছেন না বলে জানান।
উঁচু গাড়িগুলো আটকে যাবে, তা রেল কর্মকর্তারা জানতেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক শামিমা নাসরিন এ বিষয়ে বলছেন, ‘সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করার পর বেধে যাচ্ছে তা না। এটাতে আগেই বড় গাড়ি আটকে যেত। আমিও এর সঙ্গে দুয়েকবার ধাক্কা খেয়েছি। আমি নিজে ওখানে নোটিস দিয়েছিলাম, ওভার হাইট গাড়ি যাওয়া যাবে না। আমরা নির্মাণের আগেই বিষয়টি জানতাম, কিন্তু আমাদের এ সেতু এক ইঞ্চিও উঁচু করার সুযোগ ছিল না। কারণ পাশেই গেণ্ডারিয়া রেলস্টেশন। এখানে ট্রেনের যাতায়াত চার-পাঁচ গুণ বাড়বে। পদ্মা রেলসেতু চালু হলে এখানে আন্তঃনগর ট্রেন থামবে। এজন্য ইয়ার্ড ও লুপলাইন অনেক বড় হয়। উঁচু করতে গেলে গ্র্যাডিয়েন্ট মিলবে না।’ উঁচু যানবাহনগুলোকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হবে বলে তিনি জানান।
রেলসেতুটা উঁচু করলে সমস্যার সমাধান হতো বলে অনেকে মনে করেন। এ বিষয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, রেলসেতু উঁচু করতে হলে তার আগে থেকেই রেললাইন উঁচু করতে হবে। কিন্তু সায়েদাবাদ রেল ক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার থাকার কারণে উঁচু করার সুযোগ নেই।
উঁচু করতে গেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনকে বৈদ্যুতিক লাইনে রূপান্তর করার যে পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে ঝামেলা হয়। বৈদ্যুতিক লাইনের জন্য ওপরে সাত ফুট ফাঁকা থাকা দরকার, রেললাইন উঁচু করলে ফ্লাইওভারের কারণে সাত ফুট ফাঁকা থাকে না।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ড. শামসুল হক মনে করেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এর চেয়ে কঠিন বিষয়ও সমাধান করা হয়েছে প্রকৌশল বিদ্যায়। তারা (রেলওয়ে) সড়কটিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় এ রকম হয়েছে।’
এ প্রেক্ষাপটে রাস্তাটা এক-দেড় ফুট নিচু করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, পদ্মা রেল প্রকল্পের পুরো কাজ যখন শেষ হবে, তখন রাস্তাটা এক-দেড় ফুট নিচু করে দেওয়া হবে। আপাতত এখানে উচ্চতা নির্দেশক সাইনবোর্ড লাগানো হবে।