× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৩০ ভাগ যান বিদ্যুচ্চালিত করতে চায় সরকার

রাশেদুল হাসান

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১১:৫২ এএম

আপডেট : ২৯ মে ২০২৩ ১৩:০২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের পরিবহন খাতের ৩০ শতাংশ যানবাহন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুচ্চালিত যানে রূপান্তর করতে চায় সরকার। এখন কার্বন হ্রাস-সংক্রান্ত প্রটোকলের শর্তানুযায়ী, বাংলাদেশকে ৩ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে।

এ লক্ষ্যে বাস, ট্রেন ও মোটরসাইকেলের মতো বাহনগুলোকে বৈদ্যুতিক যানে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দেশে আধুনিক প্রযুক্তির এ গণপরিবহনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎপাদন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ থেকে সেগুলো নিরাপদে ডিসপোজাল পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে বহু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। 

এসব মোটরযানে ব্যাটারি উৎপাদন, পুনঃচক্রায়ন ব্যবস্থা, সৌরশক্তি সমন্বিত চার্জিং ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত নির্ভরতা থাকায় এটি দেশকে দিতে পারে একটি ডিজিটাল পরিবহন ব্যবস্থা। তবে দেশে এ ধরনের গাড়ি চলাচলের অবকাঠামো ও সহায়ক পরিবেশ না থাকায় সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আবার এ গাড়ির ব্যাটারির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকলে হতে পারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়; পাশাপাশি বিদ্যুতের প্রচুর চাহিদা তৈরি হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি শব্দ ও বায়ু দূষণ করে না, ইঞ্জিন দরকার হয় না; তাই এটি আকারে ছোট, দামেও কম। সঙ্গে আছে প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। এসব কারণে টেকসই উপায়ে যানবাহন ব্যব্স্থাপনা করা যায়। 

আর অসুবিধার দিকগুলো হচ্ছে, দেশের বিদ্যমান মোটরযান মূলত পেট্রোল, ডিজেল ও সিএনজিচালিত হওয়ায় এ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া এ ধরনের গাড়ির জন্য বাংলাদেশে মোটরযানে টেস্টিং ও রিচার্জ ল্যাব এবং মেরামতসেবার জন্য কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি নেই। 

সম্প্রতি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন আয়োজিত ওয়ার্কশপে গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি রানার জানায়, দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহন চালু করতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো চার্জিং পয়েন্ট ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ মেকানিকের অভাব, ব্যাটারির দাম বেশি ও আলাদা বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনেরও অভাব রয়েছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ১০০ দ্বিতল ইলেকট্রিক বাস কিনতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৮০টি ঢাকায় ও ২০টি বাস চট্টগ্রামে যাত্রীসেবা দেবে। 

বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এসব শীতাতপ ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত বাস ঢাকার গণপরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এসব যানবাহনের জন্য বিআরটিসির আটটি ডিপোতে চার্জিং স্টেশন হবে। এ ছাড়া চালক ও মেকানিকদের এ বাসের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সরকার এরই মধ্যে বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচল-সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ প্রকাশ করেছে। এর আওতায় বাইসাইকেল, রিকশা ও রিকশাভ্যান ব্যতীত সব ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জ সংযুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত মোটরযানকে নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশনা-২০২২ তৈরি করেছে। 

এ ছাড়া দেশের চলমান ইজিবাইককে নিরাপদ মডেলে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. এহসানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কাউন্সিল। 

অধ্যাপক এহসান বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর বড় সমস্যা হবে চার্জিং। বড় গাড়ির জন্য ফাস্ট চার্জার লাগবে। ছোট গাড়িতে কিন্তু ৫-৬ ঘণ্টা লাগে চার্জ হতে। আমাদের দেশে যে ইজিবাইক চলছে, এগুলো বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নয়। লিড ব্যাটারি হওয়ায় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নয় এবং পরিবেশের জন্যও সমস্যা হতে পারে। ব্যাটারিও টেকসই নয়। আমাদের লিথিয়াম ও আয়নের পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী ব্যাটারি দরকার। যদিও এর দাম বেশি হলেও তা টেকসই।’

তিনি মনে করেন, এ ব্যাটারির আয়ু শেষ হলে রিসাইক্লিং করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা হয় না। 

এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. শামসুল হক বলেন, ‘এর জন্য আসলে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস ফিলিং স্টেশন এবং পার্কিং ইয়ার্ডগুলোতে বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন করতে হবে। এ ছাড়া মোটরযানের জন্য যেমন দেশব্যাপী রিফুয়েলিং স্টেশন করা হয়েছে, সেরকম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে এ সুবিধা গড়তে না পারলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। ব্যাটারি পরিবর্তনের ব্যবস্থার উপযোগী মোটরযান থাকলে সেরকম ব্যবস্থাপনাও তৈরি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কনভার্সন ইঞ্জিনের গাড়ি ভবিষ্যতে বিশ্বের অনেক দেশ তৈরি করবে না। জাপান এখনও এ বিষয়ে দোটানায় আছে, তারাও না করতে পারে। বিশ্বে যারা গাড়ি উৎপাদন করবে, তারা এ কনভার্সন ইঞ্জিনের গাড়ি বন্ধ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে ঢুকবে। অনেকে হাইব্রিড গাড়িও উৎপাদন করবে।’ 

পরিবহন কোম্পানি শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবেশবান্ধব হওয়াতে মালিকরা এটি চালুর বিষয়টি স্বাগত জানাবেন। 

তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যদি সরকার টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়ালের জন্য বাস নিয়ে আসে, তাহলে আমরা এর মেরিট ও ডিমেরিট বুঝতে পারব। তখন চিন্তাভাবনা করতে পারব। আমরা সাধারণত জাপানের গাড়ি কিনে অভ্যস্ত। কিন্তু জাপানের কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি আমাদের দেশে এখনও আসেনি। ভারতের অশোক লেল্যান্ড ও টাটার গাড়ি আমাদের দেশে চলছে। যেহেতু কলকাতা অন্য বড় শহরে বেসরকারি পর্যায়ে প্রসার পায়নি। তাই এসব কোম্পানি কারা কীভাবে আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আসছে, তা দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মালিকরা যদি দেখেন এ ধরনের বাস তাদের লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব, তাহলে তারা এ বাস নিতে চাইবেন বলে রমেশ জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা