× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক হচ্ছে চার লেন

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩ ১২:০৪ পিএম

আপডেট : ২৫ মে ২০২৩ ১৩:৫৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের প্রধান বাণিজ্য প্রবেশপথগুলোর মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করে দেশের পশ্চিম এবং পূর্ব-উত্তর অংশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোরের বনপাড়া থেকে কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহ পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক হচ্ছে। অবশ্য সার্ভিস লেনসহ এটি হবে ছয় লেনের।

প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বনপাড়া থেকে যশোর হয়ে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর পর্যন্ত একটানা চার লেন সড়ক সুবিধা তৈরি হবে। 

এ লক্ষ্যে হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প- ‘উইকেয়ার ফেজ-১’ হাতে নিয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পে ৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। তবে প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি খাতে অবাস্তব ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, প্রকল্পটিতে ২০ জনের বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একেকজনের বিদেশ প্রশিক্ষণের পেছনেই খরচ হবে ১৩ লাখ টাকা। অথচ এর আগে প্রকল্পটির প্রাথমিক প্রস্তাবে ২০ জনের বিদেশ প্রশিক্ষণে দুই কোটি তিন লাখ টাকা প্রস্তাব করা হলে তা কমিয়ে দেড় কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলা হয়। অথচ এখন আরও খরচ বাড়িয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

দেশে অনেকগুলো চার লেন সড়ক হওয়ার পরও কেন এই প্রকল্পে এত টাকা খরচ করে বিদেশ যেতে হবে, তা জানতে চাওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের কাছে। তিনি বলেন, ‘কমাতে বলার পরও তারা কেন বাড়িয়েছে, তা প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় জানতে চাওয়া হবে। আদৌ এই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিদেশে প্রশিক্ষণে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হলেই তো পরিকল্পনা কমিশন সেটা দিয়ে দেবে না। আর বিদেশ না গেলে তো খরচই হবে না। পরিকল্পনা কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ হবে।

এদিকে প্রকল্পটিতে ৯৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার ছয় লেন সড়ক নির্মাণে তিন হাজার ৩২৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ৩৩ কোটি টাকা। যেখানে ঝিনাইদহ-যশোর চার লেন মহাসড়ক তৈরিতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ২৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পটিতে খরচ বেশি লাগার বিষয়ে মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের নতুন রেট শিডিউল অনুযায়ী করা হয়েছে, যার কারণে এর ব্যয় বেশি। এ ছাড়া ওই এলাকার ভূমির ওপর নির্ভর করে সড়কের ব্যয়।

প্রকল্পটিতে ছয় ধরনের দুই হাজার ৩৩৫ জন পরামর্শকের পেছনে যাবে ১৮০ কোটি টাকা। আমাদের দেশে এত চার লেন সড়ক হচ্ছে, তারপরও পরামর্শকের পেছনে এত টাকা খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পরামর্শক ব্যয় কত যাবে, সেটা টেন্ডারের ওপর নির্ভর করবে। এটা ধারণা অনুযায়ী করা হয়েছে। তবে পিইসি সভায় সবকিছু চূড়ান্ত হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, আমাদের বেশ কিছু ভালো মানের চার লেন সড়ক হলেও কাজের মান আরও ভালো হওয়ার জন্য পরামর্শের প্রয়োজন আছে। তবে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা দক্ষ হচ্ছেন।

প্রকল্পটিতে পাঁচ হাজার ৩২৮ মিটার উড়ালসড়ক, আন্ডারপাস রেলক্রসিং নির্মাণে ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ২৬৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে এক হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ‘প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট পার জিসিসি’র জন্য এক হাজার ১৩৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। ২ শতাংশ ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি হিসাবে ২০৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কনস্ট্রাকশন সাইট ম্যানেজমেন্টে ২৩২ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। আইটিএস এবং ওএফসি সিস্টেম ইনস্টলেশনে ৭৪ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ৮০ হাজার ৩৩৮ মিটার স্টোর্ম ড্রেনেজ ওয়ার্কে ১৯৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। রোডের আর্থওয়ার্কের জন্য ৩৮৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ল্যান্ড রিসেটেলমেন্টে ধরা হয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পের প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, এলাইনমেন্টটি ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ রুট ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন-যশোর-ঝিনাইদহ-বনপাড়া-হাটিকুমরুল, যার মোট দৈর্ঘ্য ২৬০ কিলোমিটার। ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট (উইকেয়ার) প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ সহায়তায় ২৬০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ করিডোরের উন্নয়ন করা হবে। করিডোরটি মোট চারটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন ৫৮ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ৬৬ কিলোমিটার ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল ৮৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এই চার অংশের মধ্যে ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন এবং যশোর-ঝিনাইদহ অংশ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) এবং ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশ উন্নয়নে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ সহায়তা দেবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝিনাইদহ থেকে যশোর পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কাংশ উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘উইকেয়ার ফেজ-১ : ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি ঋণ সহায়তায় বনপাড়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত মোট ৯৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার সড়কাংশ সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে প্রাথমিক প্রস্তাবে কুষ্টিয়া লালন শাহ সেতু থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৮২ কিলোমিটার সড়কাংশ সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করতে পাঁচ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো যাত্রীদের একটি নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুত চলাচলের সুবিধা প্রদান করা এবং বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে মালবাহী যান চলাচল। প্রয়োজনে মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন সক্ষম করার মাধ্যমে স্থানীয় ট্রাফিক এবং ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা। ইডব্লিউসিডি (বয়স্ক, মহিলা, শিশু এবং ভিন্নভাবে অক্ষম ব্যক্তি) বন্ধুত্বপূর্ণ হাইওয়ে অবকাঠামো প্রদান করে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো এবং সড়কের মাধ্যমে দেশের প্রধান বাণিজ্য প্রবেশপথগুলোর মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা এবং দেশের পশ্চিম ও পূর্ব-উত্তর অংশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সেই সঙ্গে স্থলবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (ইজেড) আরও ভালো অ্যাক্সেস্যাবিলিটি প্রদান এবং একইভাবে আন্তঃজেলা বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হচ্ছে- প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল, রাস্তা, আলো, ড্রেনেজ, রাস্তার সরঞ্জামাদিসহ ৯৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেন বিভক্ত মহাসড়ক নির্মাণ করা। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯টি ফ্লাইওভার, ওভারপাস, আন্ডারপাস (১৭০২.৪০ মিটার), সাতটি সেতু (৪১৭ দশমিক ৬১ মিটার), ১০৩টি কালভার্ট (৪৯৭ মিটার), চারটি রেল ওভারপাস (২৬১৫.৯৭ মিটার), ১১টি ফুটওভার ব্রিজ ও অন্যান্য। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা