প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩ ২৩:৫৪ পিএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৩ ১২:০৯ পিএম
সংগৃহীত
মঙ্গলবার (২৩ মে) থেকে আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গেরে উপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাত বয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে এ সময় প্রচুর ঝড় ও বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
সোমবার (২২ মে) রাত সাড়ে ৯টায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে প্রচুর ঝড় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। আর বুধবার দেশের অধিকাংশ জেলায় কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাত বয়ে যেতে পারে। কালবৈশাখী ঝড়ের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকবে রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে। সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঝুঁকি রয়েছে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সকল জেলায়, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। ঝড় ও বৃষ্টি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ২ থেকে ৫ জুন মৌসুমি বায়ু উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু হতে পারে।
তবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখন যেমন বৃষ্টি ও ঝড় হচ্ছে তেমনই হবে। তবে এটি বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, এ মাসের শেষ সপ্তাহ বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করতে শুরু করবে। এটি টেকনাফ হয়ে সাধারণত প্রবেশ করে। অনেক সময় ৪-৫ দিন সময় লেগে যায়। এই মৌসুমি বায়ু প্রবেশের কারণে ঝড়টা কমে যাবে। বৃষ্টি দীর্ঘক্ষণ হবে। এখন যেমন অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হয় তখন হালকা বৃষ্টি হবে অনেক সময় ধরে। এখন যেমন কোন স্টেশনে ৪০-৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় তখন এটি ২০০ বা ৩০০ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি পরিমাণ হবে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়।
মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি
মৌসুমি বায়ু শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ থেকে এসেছে। ‘মাওসিম’ শব্দের অর্থ ঋতু বা কাল। মৌসুমি শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি(১৬৫৬)।
প্রক্রিয়া
গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ভূখণ্ডে প্রচণ্ড তাপের কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়, একই সময়ে ভারত মহাসাগর তুলনামূলকভাবে শীতলতর হওয়ায় উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পসহ সাগর থেকে ভূখণ্ডে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় যা ভারি বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুই শাখায় বিভক্ত। আরব সাগর প্রবাহ এবং বঙ্গোপসাগর প্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহ ভারতের কেন্দ্রভূমির আবহাওয়ার উপর অধিক প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি মূলত গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জুন মাসের শুরুর দিকে এই বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের কেন্দ্র-অঞ্চলের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে।
শীতকালে ভারত মহাসাগরের জলের তুলনায় ভারতীয় ভূখণ্ড দ্রুত শীতল হয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে শীতকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহের একটি ধারা বাংলাদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ধাবিত হয়।