আরপিও সংশোধনের খসড়া অনুমোদন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩ ২১:২৪ পিএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩ ২২:৫৯ পিএম
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি
পেশিশক্তি প্রয়োগ, অনিয়ম, কারচুপি হলে যেকোনো মুহূর্তে এক বা একাধিক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত অথবা বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে না তারা। ইসি চেয়েছিল গেজেট প্রকাশের পরও পুরো ভোট বাতিল করার ক্ষমতা। তবে সেটিও তারা পাচ্ছে না। এসব বিধান রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) -এর সংশোধিত খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন-২০২৩ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ’ভোটের সময় যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হবে, শুধু সেসব কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে ইসি।’ তিনি জানান, ফলাফলের গেজেট হওয়ার পরও প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা চেয়েছিল ইসি। এজন্য আরপিওতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না ইসি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী, অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বেসরকারি ফল প্রকাশের পরও সেটি তারা বাতিল করতে পারবে—এই ক্ষমতা তারা পাচ্ছে।
সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ’খসড়ায় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পূর্বে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে ঋণ পরিশোধ করতে হতো। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থীরা কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ এবং বিলখেলাপিরা তাদের খেলাপি টাকা জমা দিতে পারবেন। একইভাবে আয়করের রসিদ পেশ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ’বৈধভাবে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশে ও কাজে যে কেউ বাধা দিলে দুই থেকে সাত বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও)।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ’মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে গুরুত্ব পেয়েছে ইসির নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা নিয়ে। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হলে ইসি নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। গেজেট প্রকাশের পরও ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইসির প্রস্তাবে রাজি নয় মন্ত্রিসভা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরো আসন নয়, শুধু এক বা একাধিক কেন্দ্রের ভোট বন্ধ বা বাতিল করতে পারবে ইসি। সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।‘
এছাড়া রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব ধরনের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাস্তবায়নের সময় ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ’জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন অনুযায়ী একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা আগে জেলাভিত্তিক হতেন। এখন আসনভিত্তিক করার বিধান সংশোধনীতে যুক্ত হয়েছে।’
আরপিও ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মন্ত্রিসভা প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন, সুরক্ষিত লেনদেন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনসহ তিনটি আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানুয়ারি-মার্চে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৬৪.৮১ শতাংশ
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ’চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ’গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৫টি, বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল দুটি, পাঁচটি চুক্তি বা প্রোটোকল অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি।’