প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩ ২২:০৪ পিএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৩ ২২:০৯ পিএম
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি : সংগৃহীত
ছয় দেশের কূটনীতিকের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও রাষ্ট্রদূতদের মূল নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই বহাল থাকবে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার (১৬ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি আরবের মিশনপ্রধানরা এই অতিরিক্ত পুলিশ পাহারা পেতেন। আরও দুই-তিনজন সময়ে সময়ে এই সুবিধা নিতেন। সম্প্রতি সরকার এই বাড়তি ব্যবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমার মনে হয় না। দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, সেগুলো অনেক সাবস্ট্যান্টিভ এলিমেন্টের সাথে জড়িত থাকে। এটা (বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার) প্রটোকল রিলেটেড একটা জিনিস।’ এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে বলেছেন, ‘ভিয়েনা কনভেশন অনুযায়ী যেকোনো স্বাগতিক দেশকে সব কূটনৈতিক মিশন ও কর্মীদের সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’ সে প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, ‘তাদের নাম্বার অব নিরাপত্তা পার্সোনাল। সেটা তো কমেনি।’ তিনি বলেন, ‘গানম্যান বা অন্য প্রেমিসেসগুলো তাদের এবং তাদের দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের বাসভবনে। সেগুলো ইনট্যাক্ট রয়েছে। সুতরাং ভিয়েনা কনভেনশনে যে রেসপন্সিবিলিটিগুলো দেওয়া হয়েছে, হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে আমরা অবশ্যই সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আমরা সেগুলো ম্যানেজ করব।’
বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের মূল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটা জিনিস বলতে পারি যে, আমাদের বেসিক যে সমস্ত অবলিগেশন আছে রাষ্ট্র হিসেবে এবং সেটা বিভিন্ন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতরা আছেন, তাদের বেসিক যে নিরাপত্তা, সেটা কখনোই আমরা কম্প্রোমাইজ করব না, এটুকু আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আরেকটা হচ্ছে, অলটারনেটিভ ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি, ব্যাটালিয়ন আনসার আছে, তাদেরকে অনেক দিন ধরেই প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
ব্যাটালিয়ন আনসার দিয়ে বাড়তি প্রটোকল দেওয়ার ব্যবস্থা দুই-এক দিনের মধ্যে দূতাবাসগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। বাড়তি পাহারা সরিয়ে নেওয়ার আগে দূতাবাসগুলোকে জানানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে নোটিফিকেশনের ব্যাপার ছিল না। যখন হলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটল, তারপরে আমাদের রেকর্ডসে আমরা দেখেছি, সেখানে তাদের থেকেও কোনো রিকোয়েস্ট আমরা খুঁজে পাই নাই বা আমাদের কোনো নোটিফিকেশনও হয়নি।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সে সময় জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা ছিল, সেটার বিবেচনায় তখন তাদেরকে এটা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা গেছে যে, এটা (বাড়তি পুলিশ) মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই করত। সুতরাং তাদের আসল যে নিরাপত্তার বিষয়টা সেটা কিন্তু অপরিবর্তিতই আছে।’
রাষ্ট্রদূতদের নিজ দেশের পতাকা প্রদর্শনের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি, এটা সত্য যে… উদাহরণস্বরূপ নিউ ইয়র্ক বা জেনিভাতে, আমি নিউ ইয়র্কে কাজ করেছি, সেখানে কখনও ফ্ল্যাগ ওড়ানোর কোনো সিস্টেমই নাই। অন্যদিকে, অনেক দেশে আছে যেখানে রাষ্ট্রীয় যত মিটিংয়ে যাবেন, তখন আপনি ফ্ল্যাগ উড়িয়ে যেতে পারবেন।’
ছয় দেশের কূটনীতিকের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রতিটি দূতাবাসেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বিধান অব্যাহত রেখেছেন এবং রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত আছেন।’ কয়েক বছর আগে গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই কূটনীতিকদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ এসকর্ট দেওয়া হচ্ছিল। তবে এখন বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো হুমকি নেই বলে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তবে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসারের একটি দল তৈরি রয়েছে। কোনো দূতাবাস চাইলে অর্থের বিনিময়ে সেই সেবা নিতে পারবেন।
সোমবার রাতে একটি টেলিভিশন টক শোতে পুলিশের এসকর্ট সরিয়ে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, সৌদি দূতাবাসের জন্য ৫৩ জন পুলিশ সদস্য থেকে পাঁচজন, ব্রিটিশ হাই কমিশনের ৩৬ জন থেকে সাতজন এবং মার্কিন দূতাবাসের জন্য ১৬৬ জন থেকে ৮ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থাপনা, এম্বাসি, ক্লাব, সৌদি রিলিফসহ এখন ৪৮ জন মোতায়েন আছেন। তাদের এসকর্ট কারে ট্রাফিকে সহায়তা করতে পাঁচজন থাকতেন। এই পাঁচজনকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ব্রিটিশ হাই কমিশনের দূতাবাস, রেসিডেন্স, ক্লাব, বিভিন্ন কাউন্সিল মিলে ২৯ জন অব্যাহতভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এসকর্ট হিসাবে ৭ জন ছিলেন। এই সাতজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, বাসভবন ও অন্যান্য স্ট্যাবলিশমেন্টে ১১৭ জন ও দেশটির অন্যান্য কূটনীতিকদের বাসভবনে ৩৯ জন পুলিশ মোতায়েন থাকার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, দুইজন গানম্যান আছেন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার জন্য। ১৫৮ জন এখনো ডিউটি করছেন। এসকর্ট হিসাবে যে ৮ জন ছিলেন তাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।