বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ২০:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩ ২১:২৩ পিএম
শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। প্রবা ফটো
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ধরনের গণবিরোধী ও নিপীড়নমূলক আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ৩০টির বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
শনিবার (৬ মে) বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাপত্রে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো, ১. অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে এবং এ আইনে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
২. অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা খাতের অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটের অধিকার হরণের পাঁয়তারাসহ জনস্বার্থবিরোধী নিত্য নতুন আইন প্রণয়নের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় আনতে হবে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. নিরাপত্তার অজুহাতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া বন্ধ করে সংস্কৃতিচর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ব্যারিস্টার জেডআই খান পান্না, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের অভিজিৎ রায় রঘু, সংহতি সংস্কৃতি সংসদের ইফতেখার আহমেদ বাবু, ভাসানী পরিষদের ডা. হারুন অর রশিদ, প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি জাকির হোসেন, আসাদ পরিষদের শামসুজ্জামান মিলন প্রমুখ।
এ ছাড়া গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ ও গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বদেশ চিন্তা সংঘের হাসান ফকরি, তীরন্দাজের দীপক সুমন, আসাদ পরিষদের শামসুজ্জামান মিলন, কবি মাসুক শাহী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কামরুজ্জামান ভূঁইয়া।
‘তুমিই বাংলাদেশ’ শিরোনামে নাটক পরিবেশন করেন বটতলা পারফরম্যান্স আর্টের শিল্পীরা। ‘একটি সাহসী ফুল দেখা যায়’ শিরোনামের নাটক পরিবেশন করে থিয়েটার ৫২। তীরন্দাজের শিল্পীরা নিয়ে আসেন ‘ডেভেলপমেন্ট’ নামে প্রতিবাদী নাটক। এ ছাড়া ধাবমান সাহিত্য আন্দোলনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন পারফরম্যান্স আর্ট। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আমিরুন নূজহাত মনীষা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বাহাত্তরের সংবিধানের চেতনাবিরোধী নানা আইন-কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার পাঁয়তারা চলছে। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অন্যতম। সংবিধানের মৌল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই আইনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম, শিক্ষক, ছাত্র, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি এবং বিরোধীমত দমনের অন্যতম হাতিয়ার বানানো হয়েছে এ আইনকে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ধরনের আইন কখনোই বলবৎ থাকতে পারে না।
সমাবেশে প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এতে বলা হয়, সরকার অগণতান্ত্রিক, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে একের পর এক সংবাদকর্মী ও সমাজের নানা স্তরের মুক্তচিন্তার মানুষকে গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে চলেছে। ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে কথায় কথায় মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে গ্রেপ্তার-হয়রানির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশ এক বর্বর সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে।