প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৩ ২১:০৯ পিএম
জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে ‘ডোন্ট গ্যাস এশিয়া’ ক্যাম্পেইন। আলী হোসেন মিন্টু
জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে ‘ডোন্ট গ্যাস এশিয়া’ ক্যাম্পেইন। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হয় এ ক্যাম্পেইন। এ উপলক্ষে মূকাভিনয় ও মানববন্ধন করে আয়োজকরা।
ইক্যুইটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, বেলা, ব্রতী, ক্লিন, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিক, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও একযোগে ক্যাম্পেইনটি করা হয়।
ক্যাম্পেইনে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির ভয়াবহ সম্প্রসারণকে রুখে দিতে ঢাকার পাশাপাশি একযোগে এদিন টোকিও, ম্যানিলা, ইঞ্চেওন, মান্ডালুইয়ং, জাকার্তা, চিয়াং মাই, হানই, দিল্লী, কলকাতা, কাঠমুন্ডু, লাহোর ও করাচিতেও এই ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। পুরো এশিয়ায় এই সমাবেশ আয়োজন ও সমন্বয় করেছে এশিয়া এনার্জি নেটওয়ার্ক ও এপিএমডিডি (এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট ফর ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশীদ ও সঞ্চালনা করেন ওয়াটারকিপার্সের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এএসএম বদরুল আলম, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রতিনিধি বারীশ হাসান চৌধুরী, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম তুব্বুস, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট রাওমান স্মিতা, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী এস জেড অপু প্রমুখ।
এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়কারী ও এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘এশিয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও পাইপলাইন সম্প্রসারণের জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্প চলছে। আমাদের এই প্রকল্পগুলোর প্রয়োজন নেই। এগুলো এই অঞ্চলে জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট সমাধানের পরিবর্তে আরও সমস্যা তৈরি করবে। কারণ গ্যাস কয়লার মতোই ক্ষতিকর। ডোন্ট গ্যাস এশিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা সরকার, ব্যাংক ও করপোরেশনের কাছে এই বার্তা পাঠাচ্ছি, গ্যাস ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণ বন্ধ করুন। দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করুন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াটারকিপার্সের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো এরই মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। তারা বিভিন্ন বছরকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করে ঘোষণা দিয়েছে যে এই নির্ধারিত সময়ের পর তারা আর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করবে না। কিন্তু এই উন্নত দেশগুলোই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উন্নয়নের নামে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে মানুষকে অপূরণীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যারা পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষা করতে চায়, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি টেকসই সমাধানের কথা ভাবে, তারা একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বিনিয়োগকারী দেশ ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের এই তৎপরতা রুখে দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশে যেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির সহজলভ্যতা সৃষ্টি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই হাত ধরে এশিয়ার দশটি দেশে একত্রে এই ডোন্ট গ্যাস এশিয়া ক্যাম্পেইনের পথচলা শুরু হলো।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশীদ বলেন, ‘মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমি বলতে পারি যে মানবাধিকারের জায়গাটা তিলে তিলে হারিয়ে যাচ্ছে। এই বায়ুদূষণ ও পরিবেশদূষণ আমার খাদ্য ও জলসহ প্রতিদিনের বসবাসের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে ফেলছে। উপকূলজুড়ে আমার কাজ রয়েছে; সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। এই জলবায়ু পরিবর্তন কে ত্বরান্বিত করছে, আমাদের আজকের এই ইস্যু, জীবাশ্ম জ্বালানি।’
অনুষ্ঠানে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, বৃক্ষনিধন ও জলবায়ু শরণার্থী বিষয়ে জনসচেতনতামূলক মাইম প্রদর্শন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে আয়োজনকারী সংগঠনগুলো ছাড়াও অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন ও ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।