× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের ফ্ল্যাট

মাসে অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫২ পিএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য রাজধানীর মিরপুরে গড়ে উঠেছে একাধিক সুদৃশ্য বহুতল ভবন। সরকারের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে চমৎকার সব ফ্ল্যাট। তাই এগুলো বরাদ্দ নিতে আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত আবেদন জমা হয়নি। খালি পড়ে আছে অর্ধেকেরও বেশি ফ্ল্যাট। কারণ হিসেবে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিরপুরের পরিবর্তে রাজধানীর মতিঝিল, ইস্কাটন ও আজিমপুর এলাকায় আবাসনের বরাদ্দ নিতে বেশি আবেদন করছেন।

মিরপুরের ফ্ল্যাটের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবেদন করতে সরকারের আবাসন পরিদপ্তর থেকে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এরপরও তেমন সাড়া মিলছে না। শুধু মিরপুর নয়, উত্তরার দিয়াবাড়ি, রাজধানীর বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও নোয়াখালীতেও বেশ কিছু সরকারি বহুতল আবাসিক ভবন খালি পড়ে আছে। এভাবে আবাসনের ২ হাজার ৩৪৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১ হাজার ৮০০টিরও বেশি খালি রয়েছে। ফলে সরকার প্রতি মাসে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। ৬০ লাখ টাকা হিসেবে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন আবাসন পরিদপ্তর থেকে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পছন্দের ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করছেন। একইভাবে আবেদন করছেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও। আবেদনকারীদের প্রায় ৯০ ভাগই মতিঝিল, ইস্কাটন ও আজিমপুর এলাকায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ চাইছেন। 

মিরপুরের ফ্ল্যাট কেন আকৃষ্ট করতে পারছে না সরকারি চাকরিজীবীদের? কারণ হিসেবে একাধিক কর্মকর্তা জানালেন, মিরপুর থেকে সচিবালয়ের দূরত্ব অনেক। তা ছাড়া এখানে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। ফ্ল্যাট নিলে বেতনের একটি বড় অংশ কাটা যাবে। তার চেয়ে অফিসের কাছাকাছি কোথাও ভাড়া বাসায় থাকা ভালো মনে করছেন অনেকে। মূলত এসব কারণেই মতিঝিল, ইস্কাটন ও আজিমপুরে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি। ফ্ল্যাট পেতে আগ্রহীদের তদবিরের শেষ নেই। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবদের মাধ্যমেও তদবির করছেন অনেকে। এই ফাঁকে ঘুষ-বাণিজ্যের সুযোগ নিচ্ছেন আবাসন পরিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আবেদন করেও মাসের পর মাস ধরে আবাসন পরিদপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) শহিদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, রাজধানীর মিরপুরের যেসব ফ্ল্যাট খালি আছে সেগুলোতে মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সাড়া মিলছে না। কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করা হবে।

সূত্র বলছে, মতিঝিল, আজিমপুর ও ইস্কাটন এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের দেড় হাজার আবেদন জমা পড়েছে। সচিবালয় থেকে মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এখানকার কাঠের কারখানা এলাকায় ১০ একর জায়গায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ১০টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। এর মধ্যে উপসচিব ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য দেড় হাজার বর্গফুট ফ্ল্যাটের পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রতিটিতে ৭৪টি করে ফ্ল্যাট হিসেবে পাঁচটি ভবনে মোট ফ্ল্যাট ৩৭০টি। বাকি পাঁচটি ভবনে ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৪৭২টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত পাঁচটি ভবনের মধ্যে একটিতে এখনও কেউ ওঠেননি। বাকি চারটিতে যথাক্রমে ১০, ২০, ২৬ ও ১৫Ñ মোট ৭১টি পরিবার উঠেছে। সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পাঁচটি ভবনেও বেশ কিছু ফ্ল্যাট এখনও খালি।

মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের শিয়ালবাড়ি এলাকায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ছয়টি ভবনের তিনটিতে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট বানানো হয়েছে। বাকি তিনটিতে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে। মাল্টিপারপাস হল হিসেবে আরেকটি চারতলা ভবন আছে।

সচিবালয় থেকে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সেখানে ১৪ তলা করে ছয়টি ভবন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। সেগুলোও খালি পড়ে আছে। কেউ এগুলোতে উঠতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অথচ আলীগঞ্জে আবাসন প্রকল্প নেওয়ার আগে এখানে এটি কতটা উপযুক্ত হবে, সে নিয়ে ভাবা হয়নি। একটি বিশেষ মহলের আগ্রহে এসব ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শুধু অর্থেরই অপচয় হয় না। এসব ভবনের কাজের মানও ভালো হয় না। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারী আছেন। তাদের জন্য ফ্ল্যাট খুবই জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা