প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০০:২৭ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৫৬ এএম
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ফটো
১০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিষ্পত্তি হয়নি সাভারের রানা প্লাজা ধসের মামলা। দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, আজকে ১০ বছর ধরে শুধু বলে আসছি। আশানুরূপ কিছু দেখতে পাচ্ছি না। একটা মামলা নিষ্পত্তি করতে এত সময়ের প্রয়োজন হয় না। সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রানা প্লাজা ভবন ধসের ১০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) যৌথ আয়োজিত ‘কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও শ্রমিকের সুরক্ষা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘শুধু রানা প্লাজা নয়, এর পরে আরও অনেক শ্রমিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আমরা কজনের কথা জানি? ১০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও রানা প্লাজার আহত ও নিহতের তালিকা প্রকাশ হয়নি। অল্প কিছু মানুষ ক্ষতিপূরণ পায়। আবার যা পায় তাও তিন ভাগের এক ভাগ। আমাদের এবার পরিপূর্ণ ক্ষতিপূরণের জন্য মাঠে নামা উচিত। নইলে এই শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ কখনওই পাবেন না।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকনেতা, বুদ্ধিজীবী সমাজ ও মন্ত্রণালয় যদি এক হয়ে কাজ করে তবেই আমরা এগোতে পারব। শ্রমিকদের নিয়ে যারা কাজ করেন আর আমাদের সমাজে প্রত্যেকেরই সদিচ্ছার অনেক ঝামেলা আছে। তাই ১০ বছর পার হয়ে গেলেও রানা প্লাজার মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আমরা চাই এ বিচারটা শিগগিরই শেষ হোক।’
ব্লাস্টের এ সভায় রানা প্লাজার কয়েকজন ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন মাসুদা আক্তার। রানা প্লাজা ধসে মাসুদার মেরুদণ্ডের একটা হাড় ভেঙে যায় এবং দুটি হাড় বাঁকা হয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। প্রতি সপ্তাহে তিনবার থেরাপি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। মাসুদা আক্তার বলেন, ‘সরকার বলছে সবাইকে পরিপূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কে পাইল সেটাই এখনও জানতে পারলাম না। আমাকে বলা হলো আমি নাকি ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এটা হাতেই পেলাম না। আমি বলতে চাই, আমাদের ক্ষতিপূরণ লাগবে না। আমাদের পুরোপুরি সুস্থ করে দেন। আমরা কাজে ফিরতে চাই।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্লাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য অ্যাডভোকেট জেডআই খান। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা দেশের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় ঘটনা। রানা প্লাজার পরে চকবাজার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, সিজান ফুড, সীতাকুণ্ড, সিদ্দিকবাজার, বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেট। এ ঘটনাগুলোর কারণ কী? কারণ যদি দেখতে চাই দেখব এখানে পুরাই ভাঙচুর অবস্থা রয়েছে। রানা প্লাজার বিল্ডিং অবশ্যই মাসুদ রানা তৈরি করেনি। নিউমার্কেট বা বঙ্গবাজারের আগুন তো আর মালিকরা লাগায়নি। তার মানে এখানে কোথাও না কোথাও সমস্যা রয়ে গেছে। যা কখনও সামনে আসে না। এভাবে একটা রাষ্ট্র, সংস্থা বা ব্যবস্থা চলতে পারে না। আমরা যদি দেখি এ ঘটনাগুলো ঘটার পর আমাদের বলা হয় এখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাহলে তারা যে মাঝেমধ্যে ভিজিটে যায় তখন কী ব্যবস্থা করে? মামলার যে দীর্ঘসূত্রতা শুধু রানা প্লাজার ক্ষেত্রে না, সব ক্ষেত্রেই রয়েছে।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেনারেল সেক্রেটারি ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাজেরা খাতুন, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিজামুল হকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ।